Showing posts with label স্বাস্থ্য. Show all posts
Showing posts with label স্বাস্থ্য. Show all posts

Monday, 9 May 2022

ফের বাড়ছে করোনা, দ্রুত টিকা নেওয়ার আহ্বান

ফের বাড়ছে করোনা, দ্রুত টিকা নেওয়ার আহ্বান


বিভিন্ন দেশে ফের করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করায় সবাইকে দ্রুত টিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম।

সোমবার (৯ মে) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে এক সভায় তিনি এ কথা বলেন।

খুরশীদ আলম বলেন, ইউরোপসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই ফের করোনা বাড়তে শুরু করেছে। তাই সচেতনতার পাশাপাশি এখনও যারা টিকা নেননি, তাদের দ্রুত টিকার আওতায় আসার আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে আছে। আমরা সফলভাবে টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। টার্গেট করা প্রায় সবাইকেই প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এবার আমাদের লক্ষ্য বুস্টার ডোজ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আবারও করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। তাই সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সবাইকেই অন্তত দুই ডোজ টিকা নিতে হবে। এ ছাড়া যাদের বুস্টার ডোজের সময় হবে, তারা দ্রুতই বুস্টার ডোজ টিকা নিয়ে নেবে।

Thursday, 24 February 2022

ভয়ংকর রোগ জিবিএস ভাইরাসে আক্রান্ত চন্দরপুরের যুবক সুলতানঃ দোয়া কামনা

ভয়ংকর রোগ জিবিএস ভাইরাসে আক্রান্ত চন্দরপুরের যুবক সুলতানঃ দোয়া কামনা


ভয়ংকর রোগ জিবিএস ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন গোলাপগঞ্জের চন্দরপুর গ্রামের মোঃ সহির উদ্দিনের পুত্র সুলতান আহমদ খালেদ(২৬)। বর্তমানে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে সিলেট নগরীর ইবনে সিনা হাসপাতালের আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) হঠাৎ করে সুলতান আহমদ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে স্থানীয় আছিরগঞ্জ বাজারে ডাক্তার দেখানো হয়। পরবর্তীতে তার হাত-পা অবশ হয়ে আসলে পরিবারের লোকজন তাকে সিলেট নগরীর ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে পরীক্ষায় তার জিবিএস ভাইরাস ধরা পড়ে। পরবর্তীতে তার শারীরিক অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় দ্রুত আইসিইউতে নেওয়া হয়। বর্তমানে সেখানেই তার নিবিড় চিকিৎসা চলছে।

সুলতান আহমদ খালেদ পরিবারের একমাত্র পুত্র। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সুলতান আহমদ মেঝো সন্তান। সে বর্তমানে আছিরগঞ্জ বাজারের সিটি মার্কেটের ব্যবসায়ী। পরিবারের একমাত্র পুত্রের দ্রুত সুস্থতার জন্য তার পিতা সহির উদ্দিন সকলের দোয়া কামনা করেছেন।

জিবিএস একটি বিরল নিউরোলজিক্যাল রোগ যা শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভুলভাবে তার পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্রের অংশ, মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের বাইরে অবস্থিত স্নায়ুর নানা অংশকে আক্রমণ করে।

জিবিএস (গুলেন ব্যারি সিনড্রোম) একদিকে যেমন সংক্ষিপ্ত/সংক্ষিপ্ত দুর্বলতাসহ প্রায় খুব খারাপ পক্ষাঘাতের মত অবস্থা তৈরি করতে পারে, যাতে ব্যক্তি স্বাধীনভাবে শ্বাস নিতে পারে না।

গবেষণায় দেখা গেছে শতকরা ১০% রোগী জিবিএসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অপর ৯০% রোগীই সঠিক চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠেন। সৌভাগ্যবশত, বেশিরভাগ সময়েই আক্রান্ত রোগী, জিবিএসের সবচেয়ে গুরুতর অবস্থা থেকেও পরিত্রান পান। তবে অনেকের ক্ষেত্রে আজীবন পঙ্গুত্ব বয়ে বেড়াতে হয়।

Sunday, 20 February 2022

২২ ফেব্রুয়ারির পর বিধিনিষেধ থাকছে না

২২ ফেব্রুয়ারির পর বিধিনিষেধ থাকছে না


আগামী ২২ ফেব্রুয়ারির পর থেকে করোনার বিধিনিষেধ আর থাকছে না। ২৬ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে এক কোটি টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার। 

রোববার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়েছে, ২৬ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে ১ কোটি করোনা টীকা দেয়া হবে। জাতীয় পরিচয় পত্র ছাড়াই স্থায়ী ঠিকানা লিখে নিয়ে গিয়েই টীকা দেয়া যাবে।  ২২ ফেব্রুয়ারির পর আর কোনও করোনা বাধা নিষেধ থাকবে না। তবে মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক থাকবে।

এছাড়া করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়ায় আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হচ্ছে। যদিও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুলবে ১ মার্চ থেকে।

এদিকে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে ‘বিশেষ টিকা ক্যাম্পেইন’ হবে। 

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশিদ আলম এ তথ্য দিয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জানিয়েছিলেন, আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি আমরা দেশব্যাপী করোনার ভ্যাকসিনের একটা ক্যাম্পেইন করতে যাচ্ছি। সেখানে আমরা লক্ষ্যমাত্রা রেখেছি সর্বোচ্চ সংখ্যক টিকা দেওয়ার। এর মাধ্যমে আমাদের প্রথম ডোজ দেওয়ার কাজ সম্পন্ন করা হবে। পরবর্তী সময়ে আমরা বুস্টার ডোজ এবং দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকবো। কাজেই আর বিলম্ব না করে আপনারা সবাই টিকা নিয়ে নিন।

উল্লেখ্য, করোনার ওমিক্রন সংক্রমণ রোধে দ্বিতীয় দফায় এবারের বিধিনিষেধ ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা পর্যন্ত বাড়িয়ে গত ৩ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

Sunday, 31 October 2021

‘কাল থেকে ১২ বছরের বেশি শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রম শুরু’

‘কাল থেকে ১২ বছরের বেশি শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রম শুরু’



আগামীকাল থেকে ১২ বছরের বেশি শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রম শুরু হবে, তবে কাল শুধু রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল কেন্দ্রে টিকা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণি।

রোববার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীতে একটি বইয়ের প্রকাশনী উৎসব শেষে এ কথা বলেন তিনি।

প্রাথমিকভাবে ঢাকার আটটি কেন্দ্রে টিকা দেয়া হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রথম পর্যায়ে দেশের ২১ জেলায় টিকা দেয়া হবে। স্কুল থেকেই টিকার জন্য নিবন্ধন করা হচ্ছে। অভিভাবকেরা শুধু কেন্দ্রে নিয়ে আসবেন শিক্ষার্থীদের।

এ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে ওজন বেশি কিংবা উচ্চতা কম এমন শর্ত গ্রহণযোগ্য নয়; বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।

Thursday, 21 October 2021

জ্বর কোনো রোগ নয়, জানুন এর ইতিকথা

জ্বর কোনো রোগ নয়, জানুন এর ইতিকথা


জ্বর। এটি কোনো রোগ নয়, রোগের উপসর্গ মাত্র। এখন তো জ্বর শব্দটি প্রতিটি মানুষের কাছে আতঙ্ক। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় যেভাবে বিভিন্ন জ্বরের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে তাতে আতঙ্ক থাকাটাই স্বাভাবিক। কলকাতাসহ অন্যান্য জেলায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে অনেকের প্রাণ গেছে। যে কোনো মৃত্যুই বেদনার। তবে অনেক সময় দেখা যায় রোগীর পরিবার মৃত্যুর কারণ হিসেবে প্রথমে ডাক্তারকেই দায়ী করে। এটা মোটেই কাম্য নয়। কেননা ডাক্তাররা রোগীকে বাঁচাতেই চান। রোগীরা প্রথমে নিজেরা কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে যান। তুকতাক করে বিফল হন, কেউ বা নিজের ডাক্তারি নিজে করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে চিকিৎসা কেন্দ্রে আসেন। অনেক ক্ষেত্রে রোগী সুস্থ হন, আবার অনেক ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যুও হয়।
প্রথমেই উল্লেখ করেছি জ্বর কোনো রোগ নয়। বিভিন্ন ধরনের জ্বর হতে পারে। তবে সাধারণত ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডেঙ্গি, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া, নিউমোনিয়া, হাম, ফুসফুস এবং প্রস্রাবের সংক্রমণ ইত্যাদি নানা কারণে জ্বর হতে পারে। তবে ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং ডেঙ্গি প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা খুবই কঠিন। যেহেতু বর্তমানে ডেঙ্গির প্রকোপ বেশি তাই এ রোগ নিয়ে প্রাথমিক ধারণা জানিয়ে রাখি।
ডেঙ্গি
ডেঙ্গি একটি ভাইরাস। ভাইরাসজনিত রোগের সাধারণত কোনো প্রতিষেধক নেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়। ডেঙ্গি অভিধান অনুযায়ী ইংরেজি শব্দটির প্রকৃত উচ্চারণ ডেঙ্গি, তবে ডেঙ্গি শব্দটি বহুল প্রচলিত। অন্যান্য ভাইরাল রোগের মতো এরও কোনো প্রতিষেধক নেই, টিকাও নেই। লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হয়। অন্য ভাইরাল ফিভারের মতো এটিও আপনা-আপনি সেরে যায় সাত দিনের মধ্যে। তবে মূল ভয়টা হচ্ছে এর পরবর্তী জটিলতা নিয়ে। যদি সময়মতো ডেঙ্গির যথাযথ চিকিৎসা করা না যায়, তবে রোগীর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকে। দেখা দেয় ডেঙ্গি হেমারেজিক ফিভার বা রক্তক্ষরণকারী ডেঙ্গিজ্বর।
সাধারণত ডেঙ্গিতে আক্রান্ত কোনো রোগীকে এডিস মশা কামড়ালে ডেঙ্গি ভাইরাস এডিস মশার দেহে ঢোকে। সেই ভাইরাসবাহী এডিস মশা কোনো সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ালে ডেঙ্গি ভাইরাস তার দেহে ঢুকে পড়ে এবং আক্রান্ত হন ওই ব্যক্তি। কাজেই যেহেতু এডিস মশা এ রোগের বাহক, তাই আক্রান্ত ব্যক্তির আশপাশের এলাকাজুড়ে মশা মারার দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্রও ধ্বংস করতে হবে।
লক্ষণ: হঠাৎ করে জ্বর। কপালে, গায়ে, চোখে ব্যথা। চোখ নাড়ালে, এদিক ওদিক তাকালেও ব্যথা। দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া। পায়খানার সঙ্গে রক্ত পড়া। কালো কিংবা লালচে কালো রঙের পায়খানা, এমনকি প্রস্রাবের সঙ্গেও অনেক সময় রক্ত বের হতে পারে। ডেঙ্গি হেমারেজিক ফিভার খুবই মারাত্মক। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে। সেক্ষেত্রে খুব দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
কীভাবে বোঝা যাবে: অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, অস্থিরতা, অবসন্নভাব, পেটে তীব্র ব্যথা, হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া, ত্বক কুঁচকে যাওয়া, রক্তচাপ কমে যাওয়া, বেশি বেশি প্রস্রাব হওয়া প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেওয়া মাত্র রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। ফের রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। প্রচুর তরল খাবার খাওয়াতে হবে। পরিশুদ্ধ পানি যথেষ্ট পরিমাণে খাওয়াতে হবে। সেই সঙ্গে প্রস্রাবের পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সময়মতো সঠিক ব্যবস্থাপনায় ডেঙ্গি হেমারেজিক জ্বরও সারিয়ে তোলা যায়। বেশি রক্তক্ষরণ হলে ফ্রেশফ্রোজেন প্লাজমা কিংবা কনসেনট্রেটেড প্লেটলেট, অথবা প্রয়োজনে হোল ব্লাড প্রয়োজন হতে পারে।

রোগীর মৃত্যু হয় কেন: অত্যধিক তাপমাত্রার জ্বরের জন্য দেহে দ্রুত পানিশূন্যতা দেখা দেয়। কোষের অভ্যন্তরীণ তরল কমে যায়, আশপাশের রক্তনালিতে চাপ পড়ে, শুরু হয় রক্তক্ষরণ। ইন্টারনাল ব্লিডিং। বেশি মাত্রায় রক্তক্ষরণ চলতে থাকলে অণুচক্রিক বা প্লেটলেট সংখ্যা কমে যায়। প্লেটলেট কমে গেলে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না। ফলে ধীরে ধীরে রক্তক্ষরণ আরও বাড়তে থাকে। দেখা দেয় শক সিন্ড্রম। শরীরের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার অভাবে রোগীর দ্রুত অবনতি ঘটে। রোগীর মৃত্যু হয়।
কোন পরীক্ষা করতে হবে: রোগের লক্ষণ দেখে চিকিৎসকের পরামর্শমতো রক্তে বিশেষ অ্যান্টিবডির উপস্থিতি নির্ণয়ের মাধ্যমে সাধারণত ডেঙ্গি শনাক্ত করা হয়। প্রথমদিন এনএসআই পরীক্ষা, চতুর্থদিনের মাথায় প্লেটলেট কাউন্ট করাতে হবে। এটি ব্যয়বহুল পরীক্ষা হলেও করতে হবে। সাধারণ জ্বর যদি উচ্চ তাপমাত্রায় (১০৩-র বেশি) হয়, তাহলে প্রথমেই রক্তের একটি রুটিন পরীক্ষা করে আণুচক্রিকা বা প্লেটলেট কাউন্ট দেখে নেওয়াটা জরুরি। যদি প্লেটলেট বা অণুচক্রিকা সংখ্যায় এক লাখের কম হয়, তাহলে পরবর্তী পরীক্ষার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
চিকিৎসা: বেশিরভাগ ডেঙ্গিজ্বরই সাত দিনের মধ্যেই সেরে যায় এবং অধিকাংশই ভয়াবহ নয়। প্রয়োজন যথেষ্ট পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি খাওয়া, বিশ্রাম ও তরল খাবার, ওআরএস, নুন-চিনির পানি খেতে হবে। সঙ্গে জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল গ্রুপের ওষুধ সাধারণ ডেঙ্গির চিকিৎসা। তবে ব্যথানাশক ওষুধ হিসেবে অ্যাসপিরিন বা ক্লোফেনাক জাতীয় ওষুধ মোটেই নয়। এতে রক্তক্ষরণ বেড়ে যেতে পারে। জ্বরের সঙ্গে রক্তক্ষরণের লক্ষণ দেখামাত্র হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে বিশেষ চিকিৎসার জন্য।
কখন মশা কামড়ায়: ডেঙ্গির মশা, মানে এডিস মশা সকাল-সন্ধ্যায় কামড়ায়। ভোরে সূর্যোদয়ের আধঘণ্টার মধ্যে এবং সন্ধ্যায়। সূর্যাস্তের আধঘণ্টা আগে এডিস মশা কামড়াতে পছন্দ করে। তাই এ দুই সময়ে মশার কামড় থেকে সাবধান থাকতে হবে। আমরা যদি পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন থাকি, তাহলে ডেঙ্গিকে অনেকটাই মোকাবেলা করা সম্ভব। কাজেই প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে নিজের ঘর ও আঙিনায় মশার উৎস ধ্বংস করুন। ফুলের টব, পুরোনো ক্যান বা পাত্র, এসি মেশিনের জমা পানি, গামলা, গাছের কোটরে জমা পানি পরিষ্কার, ছোট আবদ্ধ জায়গায় যাতে বৃষ্টির পানি জমে না থাকে। এসব দিকে খেয়াল রাখতে হবে। নিজেকেই উদ্যোগী হতে হবে।
চিকুনগুনিয়া 
চিকুনগুনিয়া জ্বরের কারণ একটি আলফা ভাইরাস, গোত্র টোগা ভাইরাস। এটি মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। ডেঙ্গির বাহক এডিস মশা চিকুনগুনিয়ার ভাইরাসেরও বাহক। অন্যান্য মশার কামড়েও এ রোগের বিস্তার হতে পারে তবে তা সীমিত আকারে। এ রোগের লক্ষণ হচ্ছে জ্বর, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, বমি বমি ভাব, মাংসপেশিতে ব্যথা, অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, ফুলে যাওয়া এবং বমি। হাড়ের জয়েন্টগুলো ফুলে যাওয়া এ লক্ষণ চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গির মধ্যে প্রধান পার্থক্য। ডেঙ্গিতে অস্থিসন্ধি ফোলে না। চিকুনগুনিয়ায় উলটো। এডিস মশা কামড়ানোর ৩-৭ দিনের ভেতর চিকুনগুনিয়া জ্বরের আক্রমণ হয়। এ জ্বর কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত থাকে। অল্প কিছু ক্ষেত্রে অস্থিসন্ধিতে ব্যথা কয়েক মাস থাকতে পারে। একবার চিকুনগুনিয়া হলে সারা জীবনে আর চিকুনগুনিয়া জ্বর হয় না। চিকুনগুনিয়ার চিকিৎসায় কোনো অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না। এ জ্বরের কোনো টিকা নেই। জ্বরের চিকিৎসায় প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ এবং প্রচুর তরল খাবার খেতে হবে। অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ থেকে বিরত থাকতে হবে। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া জ্বর শনাক্ত করা যায়, তবে সাধারণত রক্ত পরীক্ষা ছাড়া রোগের লক্ষণ দেখেই চিকুনগুনিয়া শনাক্ত করা হয়ে থাকে। এ জ্বরে মৃত্যুর সম্ভাবনা খুবই কম বা অতি বিরল।

ভাইরাল ফিভার 
ভাইরাল ফিভার বা ভাইরাস জ্বর বছরের যে কোনো সময় হতে পারে। তবে সাধারণত গ্রীষ্মকালেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। ভাইরাল ফিভার ভাইরাস জীবাণুর সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। জ্বরের শুরুতে এর প্রকৃতি বোঝা না গেলেও পরীক্ষার মাধ্যমে ভাইরাল ফিভার চিহ্নিত করা সম্ভব। সাধারণ লক্ষণ হলো হাঁচি, কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, সারা শরীরে ও হাতে-পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করা, প্রচণ্ড মাথাব্যথা করা, খাবারে অরুচি, বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া, শরীরের চামড়ায় বা ত্বকে র্যা শ দেখা দেওয়া ইত্যাদি। 
একই সঙ্গে শরীরের তাপমাত্রাও বাড়তে থাকে। অতিরিক্ত জ্বরের কারণে কখনো কখনো খিঁচুনি হতে পারে। এ সময় দ্রুত জ্বর কমাতে সারা শরীর ভিজে গামছা বা তোয়ালে দিয়ে মুছতে হবে। মাথায় পানি দিতে হবে। রোগীকে পাখার তলায় রাখুন। জ্বর ও শরীরের ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে। জ্বর বেশিমাত্রায় (১০২) হলে, মলদ্বারে প্যারাসিটামল সাপোজিটরি ব্যবহার করুন। খাবার স্যালাইন, ফলের রস, শরবত ইত্যাদি তরল খাবার বেশি বেশি খেতে হবে এবং অন্যান্য স্বাভাবিক খাবার স্বাভাবিক নিয়মে চলবে। অন্যান্য উপসর্গের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক কিংবা ব্যথানাশক ওষুধ খাবেন না। রোগীকে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে স্পঞ্জ করান। সব খাবারই পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়া যাবে। তবে তরল খাবার অবশ্যই বেশি বেশি খাওয়া উচিত। টক জাতীয় ফল যেমন- বাতাবি লেবু, আমড়া, কমলালেবু ইত্যাদি খেতে হবে।
সংক্রামক ভাইরাল ফিভার যেমন- ইনফ্লুয়েঞ্জা, পক্স, মাম্পস এসব ক্ষেত্রে রোগ যাতে অন্যের শরীরে সংক্রমিত হতে না পারে সেজন্য আক্রান্ত রোগীর জন্য আলাদা ব্যবস্থা করলে ভালো। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকে নিরাপদ দূরে থাকুন। রোগীর কাপড় ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। ডেঙ্গিজ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সব সময় মশারির ভেতরে রেখে পরিচর্যা করুন। শিশু এবং বৃদ্ধদের ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত রোগী থেকে দূরে রাখুন। ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রয়োজনে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে পারেন।
ম্যালেরিয়া 
বিশেষ এক ধরনের মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া রোগ হয়। উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব। এ রোগে আক্রান্ত হলে বারবার জ্বর এবং কাঁপুনি দেখা দেয়। এটি এমনকি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। স্ত্রী এনোফিলিস মশার মাধ্যমে ম্যালেরিয়ার জীবাণু ছড়ায়। ম্যালেরিয়া আক্রান্ত কোনো ব্যক্তিকে মশা কামড়ালে তখন এটি নিজের মধ্যে এক ধরনের জীবাণু গ্রহণ করে। এ মশা অন্য কাউকে কামড়ালে তখন তার রক্তে ম্যালেরিয়া জীবাণু ছড়ায় এবং তিনি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন। গর্ভবতী মহিলা যদি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন তাহলে তার গর্ভে থাকা সন্তানের মধ্যেও জীবাণু ছড়ায়। আবার ম্যালেরিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি কাউকে রক্ত দিলে তারও সংক্রমণ হতে পারে।
ম্যালেরিয়া হলে সামান্য অথবা তীব্র কাঁপুনি, শীত অনুভূত হওয়া, প্রচণ্ড জ্বর, অত্যধিক ঘাম, ক্লান্তি, অবসাদ ছাড়াও মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া হতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দুইবার রক্ত পরীক্ষা করতে হতে পারে। প্রথম সতর্কতা হিসেবে মশারি ব্যবহার করতে হবে। ঘরের দেওয়ালে কীটনাশক ওষুধ দিলে ভালো হয়। এ রোগ হলে রক্তশূন্যতা, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা, শরীরে পানিশূন্যতা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।
টাইফয়েড
টাইফয়েড জ্বরের জন্য স্যালমোমেলা বা ব্যাসিলাস টাইফোসা নামক ব্যাকটেরিয়া দায়ী। সাধারণ দূষিত খাবায় এবং পানির মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে টাইফয়েড হতে পারে। এ রোগ হলে তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, পেট ব্যথা, পায়খানায় সমস্যা, ডায়রিয়া, চামড়ায় লালচে দানা বা র‌্যাশ দেখা দিতে পারে। এছাড়া শরীরের ওজন কমতে পারে, পেট ফোলা, পেট ফাপতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে রোগী প্রলাপও বকে। এক্ষেত্রে রোগের ইতিহাস জানা দরকার, রক্ত পরীক্ষা, বোনম্যারো টেস্ট জরুরি। রোগ ধরা পড়লে কালবিলম্ব না করে ডাক্তারের কাছে যেতেই হবে। পথ্য বলতে পর্যাপ্ত তরল খাবার। উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবারই ভালো। এ রোগ প্রতিরোধে রোগীকেই সচেতন হতে হবে। ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে খাবার খেতে হবে। বাসি খাবার বিশেষ করে শাকসবজি না খাওয়াই ভালো। সবজি গরম করে খাওয়া উচিত।