Showing posts with label মুক্তমত. Show all posts
Showing posts with label মুক্তমত. Show all posts

Thursday 31 March 2022

সুবর্ণজয়ন্তীর স্বাধীনতা প্রাপ্তি ও প্রত্যাশাঃ মো. আব্দুল মালিক

সুবর্ণজয়ন্তীর স্বাধীনতা প্রাপ্তি ও প্রত্যাশাঃ মো. আব্দুল মালিক



সুবর্ণজয়ন্তীর স্বাধীনতা প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা
মো. আব্দুল মালিক

দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে জন্ম নেয় পাকিস্তান। এতে বিভাজিত হয় বাঙালি জাতির ভৌগলিক সীমানা। ব্রিটিশ উপনিবেশের কড়াই থেকে পূর্ববাংলার বাঙালি জনগোষ্ঠী গিয়ে পড়ে পশ্চিম পাকিস্তানি ভূস্বামীদের নব্যউপনিবেশে, জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে। যা মেনে নিতে পারেনি সচেতন বাঙালি সমাজ। বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন ও জাতিসত্তার অস্তিত্বের প্রশ্নে দ্বন্দ্বের পরিণতি হিসেবে মাতৃভাষার অধিকারের বিষয়টি সামনে চলে আসে। জাতীয় পরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবির ভেতর দিয়ে বাঙালির জাতীয় চেতনার উন্মেষ শুরু করেন। রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে জিন্নাহর উর্দুর ঘোষণা বাঙালি জাতিকে জাগিয়ে তোলে। আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে ছাত্র—শিক্ষক—সচেতন সমাজ। বায়ান্নতে রক্ত ঝরে রাজপথে। বাঙালির জাতীয় মুক্তি আন্দোলন সুস্পষ্ট গতিপথ অর্জন করে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তখন উপনিবেশবিরোধী আন্দোলন এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়েছে। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রভাবে দ্রুত বিশ্বের উপনিবেশ ব্যবস্থার পতন ও স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ার হিড়িক পড়ে যায়। আর তারই আলোয় আলোকিত অগ্রসর বাঙালি সমাজ পশ্চিম পাকিস্তানি শাসন—শোষণের বিরুদ্ধে প্রগতিশীল চিন্তাচেতনা ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থার পক্ষে অবস্থান নেয়। তাদের চিন্তায়, কর্মে ও লেখনীতে মূর্ত হয়ে ওঠে মুক্তচিন্তার দ্যুতি। একটি শোষণ, বঞ্চনাহীন অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের স্বপ্নে বিভোর বুদ্ধিজীবী মহল মুক্তি সংগ্রামের তাত্ত্বিক পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের চেতনার স্ফুলিঙ্গকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিয়ে ধারাবাহিক আন্দোলনে অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠেন তাঁরা। তাঁদের প্রতিটি কর্ম, কবিতা, গল্প, নাটক, স্লোগান, প্রবন্ধ সাগরমুখী নদীর মতো একমুখী হয়ে ওঠে। রাষ্ট্রভাষা বাংলা ও জাতিসত্তার অস্তিত্বের জন্য চাই স্বাধীনতা। তাইতো পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ধারাবাহিক আন্দোলন করে আসছিলেন। যার গৌরবময় অধ্যায় ১৯৫২—এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪—এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৬—এর শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ১৯৬২—এর শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯—এর গণ—অভ্যুত্থান “১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচণ ও ১৯৭১—এর মুক্তিযুদ্ধ। আমাদের জাতীয় জীবনের শ্রেষ্ঠ অধ্যায় হচ্ছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, যার মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ, একটি নতুন মানচিত্র। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জায়গা করে নেওয়া রুপকথার গল্পের মতো রোমাঞ্চকর কোন গল্প ছিলো না। এর সাথে যেমন জড়িয়ে আছে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর নির্মম অত্যাচার ও নিপীড়নের কালো অধ্যায়, তেমনি রয়েছে বীর বাঙালির সশস্ত্র সংগ্রাম ও প্রতিবাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। আমাদের স্বাধীনতার জন্য ত্রিশ লক্ষ মানুষকে শহীদ হতে হয়েছে, সম্ভ্রম হারাতে হয়েছে অগণিত মা বোনকে। রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল আমাদের সবুজ শ্যামল প্রান্তর। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আমাদের আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। 

স্বাধীনতার মাস মার্চ। বাঙালি জাতির জন্য সবচেয়ে বেদনা ও আনন্দের এ মাস। তার চেয়েও বড় কথা আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পরবর্তী স্বাধীনতার মাস। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি রাষ্ট্রকে যখন ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল, ঠিক তখনই স্বাধীনতা বিরোধী, পরাজিত শক্তি বাঙালির স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে বাংলাদেশকে অন্ধকারে ঠেলে দিতে চেয়েছিল, কিন্তু  তাদের সে চক্রান্ত সফল হয়নি। বিগত পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশ এগিয়েছে অনেক। একসময় যে দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে উপহাস করা হতো, সেই বাংলাদেশ আজ এশিয়া তথা বিশ্বে একটি সম্ভাবনাময় দেশ। ১৯৭১ সালে সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার বার্ষিক বাজেট আজ পরিণত হয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেটে। সেদিনের ১২৯ ডলার মাথাপিছু আয়ের দেশটিতে বর্তমান মাথাপিছু আয় ২৫৯১ ডলারে উন্নীত হয়েছে। সময় পেরিয়েছে, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও এগিয়েছে। আমাদের বৃদ্ধি এবং প্রবৃদ্ধির সময়ও প্রত্যাশার সঙ্গে সংগতি রেখেই ঊর্ধ্বগতি পেয়েছে। মাথাপিছু আয়, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে দৃশ্যমান পরিবর্তন, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ, দেশজ উৎপাদন ও বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও ব্যবহার এবং সম্পদ উৎপাদন ও আহরণ দৃশ্যমান হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, সে কথা নির্মোহভাবেই বলা যায়। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪২তম এবং এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ১৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকারে গত দুই যুগে সিঙ্গাপুর ও হংকংকে ছাড়িয়ে আজকের অবস্থানে উঠেছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাপী মহামারির কারণে যেখানে দেশে দেশে প্রবৃদ্ধির গতি ব্যাহত হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের ওপরে রয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি লাভ করেছে এবং মধ্যম আয়ের দেশে পদার্পণ করেছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রতিবেদন মতে, গত দেড় যুগে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনের অগ্রগতি তুলনামূলক বেশি দেখা গেছে। মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু রোধ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন সামাজিক সূচকে উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। শ্রমশক্তিতে কর্মক্ষম মানুষের অংশগ্রহণ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় বেশি। দেশে সাক্ষরতার হার ৭৪.৭ শতাংশ। সরকার এসডিজি এবং জাতীয় অঙ্গীকারের ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে চলেছে। যার মধ্যে সাক্ষরতা বিস্তার, দক্ষতা উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিতে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বিগত কয়েক বছরে জনগণের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৭২.৮ বছর। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে  ঝরে পড়ার হার কমে যাওয়ায় শিক্ষার হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের ১০০% মানুষ এখন বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে বলে সরকার সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন। আইসিটি খাতে রপ্তানি বিষয়টি অবাস্তব মনে হলেও ২০২১ সালে আইসিটি খাত থেকে আয় হবে ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার। অন্যান্য রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। রেমিট্যান্স আয় ২৪.৭৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। খাদ্যে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে অনেক আগেই। ২০২১ সালে দেশের খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিলো ৪ কোটি মেট্রিক টন। ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৪৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছ। ২০১৮—১৯ অর্থবছরে বৈদেশিক বিনিয়োগ ছিলো ৩৬০ কোটি ডলার, যা উন্নয়নের আরেক মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। ২০২০—২১ সালে অতিমারির কারণে যা কিছুটা কমেছে। গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে রাজধানীতে ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেট্রোরেল স্থাপন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যা ১৬টি স্টেশনে ঘণ্টায় প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা রাখবে। বাঙালির স্বপ্নের ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু’র কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে, যা নিজস্ব বাজেটেই সম্পন্ন হচ্ছে। বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মহাকাশে ‘বঙ্গবন্ধু—১’ স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতে, লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে বাংলাদেশ। যেকোনো সময় জরুরি ভিত্তিতে সেবা পেতে আধুনিক বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও চালু হয়েছে ‘৯৯৯’ কল সেবা। এছাড়া জনগণের সেবাদানে অন্যান্য কল সেবাগুলো চালু হয়েছে; দুদক, নারী নির্যাতন বা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, সরকারি তথ্যসেবা, স্বাস্থ্য বাতায়ন, দুর্যোগের আগাম বার্তা, জাতীয় পরিচয়পত্র তথ্য ও মানবাধিকার সহায়ক কল সেন্টার। 

এসব তথ্য—উপাত্তের ভিত্তিতে বলা যায়, একটি দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নিয়ে একটি আধুনিক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবেই পালন করছেন। তবে বাস্তবিক অর্থে একটি দেশের প্রকৃত সমৃদ্ধি বা অগ্রগতি নির্ভর করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামকের ওপর। যেমন জনগণের জীবনযাত্রার বাস্তব রূপ, ব্যক্তিগত ও সামাজিক নিরাপত্তা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, জীবনমুখী—কর্মকেন্দ্রিক মানসম্মত শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও গবেষণা, কর্মসংস্থান প্রভৃতি বিষয়গুলো উন্নয়নের প্রকৃত চিত্র প্রদর্শন করে।

স্বাধীনতার অর্ধশতক পরে একদিকে যেমন মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে অন্যদিকে সমাজে শ্রেণিবৈষম্য বেড়েছে। প্রবৃদ্ধির ঊর্ধ্বগতি কিংবা মাথাপিছু আয় অর্থনৈতিক সক্ষমতার সূচক হলেও আধুনিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার প্রভাবে বাংলাদেশে ও ধনী—দরিদ্রের ব্যবধান বেড়েছে, বেড়েছে সামাজিক অস্থিশীলতা এবং নিরাপত্তাহীনতা। দেশের আর্থিক খাতের দুটি দুষ্ট ক্ষত হলো খেলাপি ঋণ ও অর্থ পাচার। এ দুটির মধ্যে আবার পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৫ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা। অর্থ পাচার রোধে দেশে শাস্তির বিধান থাকা সত্ত্বেও কেন এ পাচার বন্ধ হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখা জরুরি। বস্তুত, দুর্নীতি বেড়েছে বলেই অর্থ পাচারের হারও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এসব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তিরা, সরকার ও রাজনীতির ঘনিষ্ঠ সহযোগী।

এছাড়াও বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, গণতান্ত্রিক পরিবেশসহ বেশকিছু ক্ষেত্রে এখনও সমস্যা রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পরম লক্ষ্য ছিলো গণতন্ত্র, জনগণের মৌলিক অধিকার, বাক, ব্যক্তি, সংবাদমাধ্যম ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং ভিন্নমতকে শ্রদ্ধা করা। এসবকে ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেই আপামর জনসাধারণ সেদিন অস্ত্র হাতে শত্রুর মোকাবেলায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। বিগত পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশ যতদূর এগিয়েছে তা নিঃসন্দেহে পরম গৌরব ও আনন্দের। তবে দুর্নীতি রোধ, মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন, বাক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ, উচ্চশিক্ষাকে গবেষণামুখী করা একটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রত্যাশা উপর্যুক্ত সমস্যাগুলি মোকাবিলা করে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার পাশাপাশি আগামীতে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশে^ নেতৃত্ব দিবে। 

Tuesday 29 March 2022

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি


স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি মো. আব্দুল মালিক বিশ্বব্যাপী অতিমারির সময় ২০২১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি তথা সুবর্ণজয়ন্তীতে সফল প্রবেশ ঘটেছে। এই সময়ে বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভাবমূর্তি অর্জন করেছে। গত ৫০ বছরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে। অবশ্য নেতিবাচক ভাবমূর্তিও আছে। পাকিস্তানি শাসন শোষণের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ সংগ্রাম আর সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। স্বাধীনতা পরবর্তী বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের যে পরিচিতি আর ভাবমূর্তি ছিল সেটি পাল্টেছে বহুভাবে। স্বাধীনতার ৫ দশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতিতে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি যেমন তৈরি হয়েছে তেমনি রাজনীতি ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বে নেতিবাচক ভাবমূর্তি এখনো আছে। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পনের মধ্য দিয়ে সৃষ্ট লাল সবুজের বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে জায়গা করে নেয়। লড়াই সংগ্রাম করে স্বাধীনতা পাওয়া এ দেশটি শুরুতেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে তকমা পায়। ৭০ এর দশকে বাংলাদেশের পরিচিতি ছিল দারিদ্র্য, দুর্যোগ আর রাজনৈতিক অস্থিরতার দেশ হিসেবে। ৭০ এর দশকে স্বাধীন বাংলাদেশকে খাদ্য ঘাটতি, দুর্ভিক্ষ আর প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত এক জনপদ হিসেবে চিনেছে বিশ্ববাসী। কিন্তু গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে আলোচিত হয়েছে। এখনো বাংলাদশ সম্পর্কে আলোচনায় প্রাধান্য পায় ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিকই। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিয়ন স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ড. আলী রীয়াজ বলেন, "বিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটা বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে প্রশংসিত হয় আর সেটা হলো রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার বিষয়। এছাড়া গণতন্ত্রের প্রশ্ন, অর্থনৈতিক সাফল্যের প্রশ্ন এবং ভূরাজনীতিতে বাংলাদেশের ভবিষ্যত অবস্থানের প্রশ্ন এই তিনটি বিষয় ও গুরুত্ব পাচ্ছে।" মি. রীয়াজ আরো বলেন "কোনো দেশেরতো কেবল একটি মাত্র ভাবমূর্তি থাকে না। বিভিন্ন বিষয়ে,,বিভিন্ন সময়ে,বিভিন্নভাবে তার ভাবমূর্তি গড়ে ওঠে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দুটি বিষয় খুব স্পষ্টভাবে আন্তর্জাতিক মহলে আলোচিত হয় তার একটি হচ্ছে গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি। আর দ্বিতীয় বিষয় হলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সাফল্য।" গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিষয়টিও ইতিবাচক ভাবে দেখা হয়। বহির্বিশ্বে সময়ের পরিক্রমায় ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপট আর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও বদলেছে। আশির দশকেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ইমেজ ছিল স্বৈরতন্ত্রের কবলে পড়া বিদেশি সাহায্য নির্ভর একটি দেশ হিসেবে। একটা বড় সময় ধরে দুর্নীতিতে শীর্ষস্থানীয় দেশ ছিল বাংলাদেশ। এই ভাবমূর্তি পরিবর্তন হতেও সময় লেগেছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান বলেন, “বাংলাদেশের উন্নতি এবং উজ্জ্বল ভাবমূর্তী তুলে ধরতে বরাবরই একটা দুর্বলতা রয়েছে। প্রথম থেকেই বাংলাদেশকে দেখানো হতো অত্যন্ত দরিদ্র একটা দেশ হিসেবে। দেশের লোক খাবার পাচ্ছে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বন্যার ছবি। আশি ও নব্বই দশকের মধ্যেই আমরা আমাদের সামাজিক সূচকে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিলাম।" মিস জাহান আরো বলেন, "তখনো বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আগের মতোই ছিল। কিন্তু গত দশ পনের বছরে যখন বাংলাদেশে ক্রমাগত জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়ছে সেটা এখন সবার নজরে এসেছে।" তাঁর মতে, "আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এখন বাংলাদেশের ইমেজ হচ্ছে এটা হয় একটা ডেভেলপমেন্ট মিরাকল নতুবা এটা হচ্ছে একটা ডেভেলপমেন্ট প্যারাডক্স বা উন্নয়নের একটা ধাঁধাঁ।" রোহিঙ্গাদের আশ্রয দান, দুর্যোগ মোকাবেলা এবং শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত। গত ৫ দশকে বাংলাদেশের যেসব অর্জন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে পরিচিত করেছে তার মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের প্রতিনিধি হিসেবে নেতৃত্ব দেয়া, তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উঠে আসা, শান্তিরক্ষা মিশনে ব্যাপক অংশগ্রহণ ইতিবাচক ইমেজ তৈরি করেছে। জঙ্গীবাদ দমনে সাফল্যের দিকটিও প্রশংসা পাচ্ছে। অন্যদিকে ভারতের সহায়তায় স্বাধীনতা অর্জনের পরও সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রেখে এ অঞ্চলে ভূ—রাজনীতিতে একটা নিজস্ব ভাবমূর্তি তৈরি করেছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশ বিচক্ষণতার সঙ্গেই গত কয়েক দশকে ভাল করছে। বাংলাদেশ একসঙ্গে ভারত, চীন, পাকিস্তান ও জাপানের সঙ্গে নানা রকম চাপ থাকা স্বত্ত্বেও সবার সঙ্গে সম্পর্ক রেখে এগিয়ে যাচ্ছে। এটা অনেকের নজরে এসেছে। সাম্প্রতিক যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বাংলাদশের অবস্থান বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের এই প্রাপ্তি সত্যিই গৌরবের।

Sunday 15 August 2021

আমৃত্যু অকুতোভয় বঙ্গবন্ধুঃ  মো: আব্দুল মালিক

আমৃত্যু অকুতোভয় বঙ্গবন্ধুঃ মো: আব্দুল মালিক




আমৃত্যু অকুতোভয় বঙ্গবন্ধু 
মো: আব্দুল মালিক

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন আমৃত্যু অকুতোভয় একজন জাতীয়তাবাদী নেতা, একজন বীর বাঙালি। তাঁর এই বীরত্বের প্রকাশ ঘটে একেবারে শৈশবে, অব্যাহত থাকে আমৃত্যু। এই মহান নেতার একশ একতম জন্ম বার্ষিকী ও ছেচল্লিশতম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষ্যে এ সম্পর্কে সামান্য আলোকপাত করতে চাই।

১৯৩৮ সাল। অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা এ.কে ফজলুল হক এবং শ্রমমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জ আসবেন। তাঁদেরকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এনিয়ে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে আড়াআড়ি চলছিল। কারণ শেরে বাংলা মুসলিম লীগের সাথে মিলে মন্ত্রী সভা গঠন করেছেন। এ সময় দু’একজন মুসলমানের উপর অত্যাচারও হয়। আব্দুল মালেক নামে বঙ্গবন্ধুর এক সহপাঠী ছিলেন। তাকে ‘হিন্দু মহাসভা’র সভাপতি সুরেন ব্যানার্জীর বাড়িতে ধরে নিয়ে আটকে রেখে মারধর করা হচ্ছে। এই খবর পেয়ে শেখ মুজিবুর রহমান কয়েকজন ছাত্র নিয়ে সেখানে হাজির হন। তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। শেখ মুজিবকে দেখে রমাপদ নামে একজন হিন্দু ভদ্রলোক তাঁকে গালি দেন। তিনিও তার প্রতিবাদ করেন। রমাপদ থানায় খবর দিলে তিনজন পুলিশ এসে হাজির হয়। পুলিশের উপস্থিতিতেও শেখ মুজিব তাঁর সহপাঠী আব্দুল মালেককে ছেড়ে দিতে চাপ দেন। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে তুমুল মারপিট হয়। তিনি দরজা ভেঙ্গে আব্দুল মালেককে কেড়ে নিয়ে আসেন। এ ঘটনায় হিন্দু নেতারা থানায় একটি মামলা করেন। এ মামলায় পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করে। “সকাল নয় টায় খবর পেলাম আমার মামা ও আরো অনেককে গ্রেফতার করে ফেলেছে। আমাদের বাড়িতে কী করে আসবে-থানার দারোগা সাহেবদের একটু লজ্জা করছিল। প্রায় দশটার সময় টাউন হল মাঠের ভিতর দাঁড়িয়ে দারোগা আলাপ করছে, তার উদ্দেশ্য হলো আমি যেন সরে যাই। টাউন হলের মাঠের পাশেই আমার বাড়ি। আমার ফুফাত ভাই মাদারীপুর বাড়ি। আব্বার কাছে থেকেই লেখাপড়া করত, সে আমাকে বলে, মিয়া ভাই, পাশের বাসায় একটু সরে যাও না।’ বললাম, ‘যাব না, আমি পালাব না। লোকে বলবে, আমি ভয় পেয়েছি।” অসমাপ্ত আত্মজীবনী-পৃষ্ঠা: ১১,১২। তখন তিনি মাত্র অষ্টম শ্রেণির ছাত্র, বয়স ১৭/১৮ বছর। সেই কিশোর বয়সেও বঙ্গবন্ধু পুলিশের ভয়ে পালান নি।

১৯৪৯ সালের ৩রা মার্চ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা ধর্মঘট করেন। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ৫ মার্চ থেকে এই ধর্মঘটে যোগ দেয়। এ ঘটনায় মোট সাতাশ জন ছাত্রকে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি প্রদান করা হয়। তম্মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান সহ ছয় জনকে জরিমানা ও মুচলেকা দিতে বলা হয়। অন্যরা জরিমানা ও মুচলেকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান জরিমানা ও মুচলেকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে অস্বীকার করে বলেছিলেন-“শেখ মুজিব আবার এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবে তবে ছাত্র হিসেবে নয়, একজন দেশকর্মী হিসেবে।” হ্যাঁ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এসেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। ব্যক্তিস্বার্থের জন্য বঙ্গবন্ধু অন্যায়ের সাথে কোনদিন আপোষ করেন নি এখানে এই পরিচয় ফুটে উঠেছে। 

১৯৬৬ সাল। শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা ঘোষণা করে দেশব্যাপী সভা-সমাবেশের মাধ্যমে জনমত গঠন করছেন। এতে ভীত হয়ে পাকিস্তান সরকার তাঁর বিরুদ্ধে ১৯৬৮ সালের জুন মাসে রাষ্ট্রদ্রোহিতার এক মামলা দায়ের করে। ১৯৬৯ সালের ২৮ জানুয়ারি এক ঐতিহাসিক দিন। এ দিন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা খ্যাত “রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য” মামলার প্রধান আসামী শেখ মুজিব বিশেষ ট্রাইবুনালে তাঁর ঐতিহাসিক জবানবন্দি প্রদান করেন। 

সকাল ১০.০৫ মিনিট। কড়া সামরিক প্রহরায় শেখ মুজিব ও অন্যান্যদের ট্রাইবুনালে আনা হলো। শেখ মুজিবের পরনে ছিল তাঁর চিরাচরিত পাজামা, পাঞ্জাবী, কালো কোট, চোখে কালো পুরু ফ্রেমের চশমা। মুখে সিগার পাইপ। দর্শকদের দিকে তাকালেন, মুচকি হাসলেন, দু’হাত ঘুরালেন, মাথা এদিক ওদিক নাড়ালেন, আত্মীয় স্বজনরা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন কিন্তু তিনি নির্বিকার। আবার হাসলেন। তারপর নির্দিষ্ট আসনে বসে পড়লেন। 
সকাল ১০:১০ মিনিট। বিচারপতি ত্রয় আসন গ্রহণ করলেন। ফাইলপত্র খুললেন, চারদিকে পিনপতন নিরবতা। শেখ মুজিব পায়ের উপর পা তুলে শান্ত ভাবে বসে আছেন। একমনে টেনে চলেছেন তাঁর প্রিয় পাইপ।
ট্রাইবুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি এম.এ রহমান নড়েচড়ে বসলেন। একবার তাকালেন ট্রাইবুনাল কক্ষের দিকে। তারপর অর্ডার অর্ডার বলে একটি ফাইল হাতে তুলে নিলেন। তাকালেন শেখ মুজিবের দিকে। তারপর ধীরস্থির কন্ঠে, সরকার কর্তৃক আনীত অভিযোগ সমূহ পাঠ করলেন, বললেন, আপনি শেখ মুজিবুর রহমান, পাকিস্তানী সরকারের আনীত অভিযোগের তদন্তে দোষী প্রমাণিত হয়েছেন। এ প্রেক্ষিতে আপনি আপনার আত্মপক্ষ সর্মথন করে আপনার বক্তব্য পেশ করতে পারেন।

১০.১৫ মিনিট। শেখ মুজিব উঠে দাঁড়ালেন। ধীর পদক্ষেপে কাঠগড়ায় গিয়ে উঠলেন। শপথবাক্য পাঠ করলেন। কোটের ভেতর থেকে কয়েক পৃষ্ঠা কাগজ বের করলেন। একবার তাকালেন দর্শকদের দিকে। সহসা তাঁর মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। তারপর জলদগম্ভীর কন্ঠে উচ্চারণ করলেন- ‘মিঃ চেয়ারম্যান, স্বাধীনতাপূর্ব ভারতীয় বঙ্গীয় মুসলিম লীগের একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে আমার বিদ্যালয় জীবনের সূচনা হইতে আমি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে সংগ্রাম করিয়াছি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার এই সংগ্রামে আমার লেখাপড়া পর্যন্ত বির্সজন দিতে হইয়াছে। ............। 

বর্তমান মামলা উল্লেখিত নিষ্পেষন ও নির্যাতন নীতির পরিণতি ছাড়া আর কিছুই নয়। অধিকন্তু স্বার্থবাদী মহল কর্তৃক শোষণ অব্যাহত রাখার যে ষড়যন্ত্রের জাল বর্তমান শাসকগোষ্ঠী বিস্তার করিয়াছে এই মামলা তাহার বিষময় প্রতিক্রিয়া। আমি কখনও এমন কিছু করি নাই বা কোনদিনও এই উদ্দেশ্যে স্থল, নেভি বা বিমান বাহিনীর কোন কর্মচারীর সংস্পর্শে কোন ষড়যন্ত্রমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করি নাই। আমি নির্দোষ এবং এ ব্যাপারে ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।” এভাবেই তাঁর জবানবন্দি শেষ করেন। এরপর আইয়ুব সরকার নিঃশর্তভাবে ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। এই মামলা নিয়ে বাঙালি জাতি উদ্ভিগ্ন থাকলেও -বংগবন্ধু ছিলেন অকুতোভয়, নির্বিকার। 

৭ই মার্চ ১৯৭১। বঙ্গবন্ধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রক্তচক্ষু ও পাকিস্তানের বোমারু বিমানের ভয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কৌশলে স্বাধীনতা ঘোষনা করেন। 

২৫শে মার্চ ১৯৭১ অপারেশন সার্চ লাইটের রাতে মৃত্যুকে তুচ্ছ জ্ঞান করে স্বাধীনতা ঘোষনা করে তিনি মৃত্যুর ভয়ে পালিয়ে যান নি, বাসায় অবস্থান করছিলেন। সেদিন রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যখন তাঁকে গ্রেফতার করে তখন তিনি বীরের মতো অবিচল ছিলেন। গ্রেফতারের পর সামরিক প্রহরারত অবস্থায় পাকিস্তান সরকার তাঁর যে ছবিটি প্রকাশ করে সেখানে তাঁকে বীরের মত বসে থাকতে দেখা যায়। 

৯ আগস্ট ১৯৭১। পাক সরকার এক বিবৃতিতে জানাল ১১ আগস্ট বিশেষ সামরিক ট্রাইবুনালে শেখ মুজিবের বিচার শুরু হবে। আসামী শেখ মুজিব তাঁর বক্তব্য পেশের উপযুক্ত সুযোগ পাবেন। নিজের পছন্দমত যে কোনো পাকিস্তানি আইনজীবী নিযুক্ত করতে পারবেন। তাঁর বিচার সম্পর্কে আবির আহাদ নামক একজন সাংবাদিককে তিনি বলেন, “আমাকে পেশোয়ারের একটা কুখ্যাত কারাগার থেকে ১০ আগস্ট রাতে কড়া পাহারায় বের করে আনা হলো। তারপর লায়ালপুর সামরিক কারাগারে ঢুকালো। একজন সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ারকে আমার পাহারায় রাখা হলো। ১১ তারিখ সকাল ১০টায় আমাকে সেনানিবাসের অভ্যন্তরে কোনো এক জায়গায় নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানেই বিশেষ সামরিক ট্রাইবুনাল বসেছে। বেলা ১১টায় আমাকে বিচার কক্ষে হাজির করা হলো। আমার সামনে সামরিক পোশাক পরিহিত তিনজন অফিসার। এরাই আমার বিচার করবে। তিনজনের মাঝখানের অফিসার সম্ভবতঃ একজন ব্রিগেডিয়ার, আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ও পাকিস্তানকে খন্ড-বিখন্ড করার মারাত্মক রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে আপনি শেখ মুজিবুর রহমান অভিযুক্ত প্রমাণিত হয়েছেন। এ প্রেক্ষিতে এই আদালত আপনাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিচ্ছে, আপনি ইচ্ছে করলে আপনার বক্তব্য পেশ করতে পারেন।’ ট্রাইবুনালের চেয়ারম্যানের কথা শোনার পর আমি নিজের অজান্তে হাসিতে ফেটে পড়ি। বলি, চেয়ারম্যান সাহেব, আপনার প্রেসিডেন্ট সাহেব কি জানেন না যে, শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের আইনানুগ রাষ্ট্রপতি ? আমার বিচার করার ক্ষমতা আপনার সরকারের আছে কি ? এ কথাটা আপনি দয়া করে আপনার প্রেসিডেন্টকে বলবেন। অবশ্য আমি আপনাদের হাতে বন্দী। আপনারা অনায়াসেই আমাকে মেরে ফেলতে পারেন। তবে মৃত্যুর ভয়ে শেখ মুজিব ভীত নয়। জানেন কি, ‘নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।’ আমি আমার বাঙালি জাতিকে নির্দেশ দিয়ে এসেছি। ওরা স্বাধীনতার জন্যে যুদ্ধ করছে। আমাকে হত্যা করতে পারেন কিন্তু আমার জাতিকে নয়। ওরা হানাদার পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করছে , রক্তের প্রতিশোধ নিচ্ছে, আমার বাংলাদেশকে ওরা মুক্ত করে ছাড়বে ইনশাল্লাহ। মি: চেয়ারম্যান, আমার শেষ অনুরোধ, আমাকে হত্যা করার পর, আমার লাশটা আমার বাংলার মাটিতে পাঠিয়ে দিবেন।’ সেই কারাগারে তাঁর জন্য কবর খোড়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি ভয়ে ভীত হন নি।  

১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১। দেশ স্বাধীনের পর বন্দী শেখ মুজিবের সাথে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভূট্টো দেখা করেন। তখনও বঙ্গবন্ধু জানতেন না, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। তথাপিও তিনি ভূট্টোর সাথে যেভাবে আলাপ করেন তাতে তাঁর আত্মমর্যাদা ও বীরত্ব প্রকাশ পেয়েছে। 

৮ জানুয়ারি ১৯৭২ যুক্ত্রাজ্য ও ভারত হয়ে ১০ জানুয়ারি বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন। বিশ্বের প্রাচীন ও বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ হচ্ছে যুক্তরাজ্য ও ভারত। এই দুইটি দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধান এবং পরবর্তী সময় বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সাথে তিনি যেভাবে মাথা উঁচু করে, আত্মমর্যাদার সাথে আলাপ আলোচনা করেছেন তা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল।
 
১৫ আগস্ট ১৯৭৫। সেই ভয়াবহ কালোরাত। যে রাতে মীরজাফরের উত্তরাধিকারী, স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরা আর্ন্তজাতিক ষড়যন্ত্রের নীল নকশা অনুযায়ি কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্য তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর বাড়িতে আক্রমণ করে। সেদিন সেনাপ্রধান কে.এম শফিউল্লাকে ফোন করে তিনি শান্ত ও সাবলীল কণ্ঠে বলেছিলেন, “শফিউল্লা তোমার বাহিনী আমার বাড়ি আক্রমণ করেছে, কামালকে বোধহয় মেরে ফেলেছে, তুমি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ কর।” তারপর তিনি তাঁর শখের পাইপ হাতে নিয়ে কক্ষ থেকে বারান্দায় এসে দেখেন তাঁর কাজের ছেলে ‘আব্দুল’ গুলিবিদ্ধ। তিনি বীরের মতো গর্জন করে বলেন ও আমার কাজের ছেলে ওকে কেন গুলি করা হয়েছে ? “তোরা কে, কি চাস ? ” তখন সামনে থাকা সৈনিকটি ভড়কে একপাশে চলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে পিছনে থাকা ক্যাপ্টেন হুদা ও মেজর নূর স্টেনগান দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গুলি করে। গুলি বঙ্গবন্ধুর বুকে লাগে, তিনি সিঁড়ির উপর লুটিয়ে পড়েন এবং সেখানেই শাহাদাত বরণ করেন। সেই ঘটনা ও ছবি সাক্ষ্য দেয় মৃত্যুর পূর্বক্ষণেও তিনি ছিলেন বীরের মতো অবিচল। প্রাণ বাঁচানোর জন্য পালানোর চেষ্টা না করে, বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের বা পরিবারের কথা চিন্তা না করে কাজের ছেলে আব্দুলের চিন্তায় মগ্ন। অভ্যাসগতভাবে সাহসিকতার সাথে অধীনস্তদের ভালো মন্দের খোঁজ নেয়া, অন্যায়ের প্রতিবাদ ও শাসন করা থেকে এ সময়ও তিনি বিরত থাকেন নি। পবিত্র হাদীস শরীফে আছে, “যখন শত্রুর সম্মুখীন হইবে তখন পৃষ্ঠ প্রদর্শন করিও না।” বঙ্গবন্ধু আমৃত্যু এই সত্য লালন করেছেন।

পক্ষান্তরে তথাকথিত স্বাধীনতার ঘোষক সৈনিক জিয়া ২৫ মার্চ রাতে বীরের মতো তীরের বেগে তাঁর পাকিস্তানী কমান্ডারের নির্দেশে বন্দরের দিকে যাচ্ছিলেন সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করতে। পথিমধ্যে জনতার ব্যারিকেড অপসারণ করে যেতে তার দেরি হচ্ছিল। তখন ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান চৌধুরী তাঁকে রাস্তা থেকে ফিরিয়ে আনেন। পরে তিনি চট্টগ্রাম শহর ছেড়ে কালুরঘাটের দিকে চলে যান। অথচ ঐ সময় চট্টগ্রামে পুলিশ, ইপিআর, আর্মির ৭৫% ছিল বাঙালি। ক্যাপ্টেন রফিক ও ক্যাপ্টেন সুবিদ আলী ভূঁইয়া সামান্য সৈন্য ও অস্ত্র নিয়ে প্রাণ পণে যুদ্ধ করে কয়েকদিন চট্টগ্রাম নিজেদের দখলে রাখতে সক্ষম হন। জিয়া যদি সেদিন তার বাহিনী নিয়ে কালুরঘাটের দিকে না গিয়ে বন্দরের অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিজের দখলে নিতেন বা জনগণের হাতে তুলে দিতেন বা ধ্বংস করে ফেলতেন তাহলে যুদ্ধের গতি প্রকৃতি অন্যরকম হতো। 

১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে রাষ্ট্রপতি জিয়া যখন সেনা বিদ্রোহে নিহত হন তখন কী তিনি বঙ্গবন্ধুর মতো সাহস দেখাতে পেরেছেন ? 

জন্মিলে মরিতে হবে, এ বিধির বিধান। তবে সকল মৃত্যু সমান নয়। কবির ভাষায়-
‘নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান
   ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’ ।

বঙ্গবন্ধু তুমি প্রকৃতই একজন অকুতোভয় বীর বাঙালি ছিলে। মৃত্যুর পূর্বক্ষণেও সেই বীরত্ব দেখিয়ে গেছো। তোমার ক্ষয় নাই, তুমি অমর, অক্ষয়। বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশ যতদিন থাকবে তুমি ততদিন থাকবে। বিশবের ইতিহাসে তোমার স্থান সবর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে। 

 বঙ্গবন্ধু ঘাতকরা তোমার নশ্বর দেহ হত্যা করেছে, তোমার আদর্শকে হত্যা করতে পারে নি। তোমার আদর্শ লালন করে তোমারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। অদুর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়ে তোমার সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে ইনশাল্লাহ। তোমার ৪৬তম প্রায়াণ দিবসে ১৫ আগষ্টের সকল শহীদের মাগফেরাত ও জান্নাতুল ফেরদৌস কামনা করছি। 

মো: আব্দুল মালিক
সহ-সভাপতি বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ, সিলেট জেলা শাখা।
সাধারণ সম্পাদক- বঙ্গবন্ধু গবেষণা সংসদ, সিলেট জেলা শাখা।

Sunday 8 August 2021

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা রেণুর অবদান

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা রেণুর অবদান

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা রেণুর অবদান
মো. আব্দুল মালিক

কবি বলেছেন, -
‘রাজা করিতেছে রাজ্য শাসন, রাজারে শাসিছে রানী।
রানীর দরদে ধুইয়া গিয়াছে, রাজ্যের যত গ্লানি।’
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আক্ষরিক অর্থে বাংলার রাজা না হলেও তিনি ছিলেন বাঙালি জাতির মুকুটহীন সম্রাট। শেখ মুজিবুর রহমান একদিনে বঙ্গবন্ধু বা জাতির জনক বা সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হন নাই। তিনি ধাপে ধাপে খ্যাতির এই শীর্ষে আরোহন করেছেন। আর এই শীর্ষে আরোহণের পিছনে যে মানুষটি তাঁকে ছায়ার মতো অনুসরণ করেছিলেন, আগলে রেখেছিলেন, সাহস যুগিয়েছিলেন, উৎসাহ-উদ্দীপনা, বুদ্ধি পরামর্শ দিয়েছিলেন, নিজের জীবনের সুখ সাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে আর্থিক সাহায্য করেছিলেন তিনি আর কেউ নন- তিনি হলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব। যার ডাক নাম রেণু।


শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আপন চাচাতো বোন। পিতা-মাতা মারা যাওয়ায় দাদা শেখ কাশেম তাঁর দুই নাতনি ফজিলাতুন নেছা ও জিন্নাতুন নেছাকে দুই ভাতিজার সাথে বাল্য বিয়ে দেন। তখন ফজিলাতুন নেছার বয়স ছিল মাত্র তিন বছর। পাঁচ বৎসর বয়সে ফজিলাতুন নেছা রেণু আসেন বঙ্গবন্ধুর পরিবারে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মা-বাবা ভবিষ্যৎ পুত্রবধু ফজিলাতুন নেছাকে বঙ্গবন্ধুর যোগ্য সহধর্মিনী হিসেবে গড়ে তুলতে থাকেন। তাঁদের সেই পরিশ্রম বৃথা যায় নি। বঙ্গবন্ধু ছাত্রাবস্থায়ই সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালীন প্রথম জেলে যান এবং মাত্র ৫৫ বছর ০৪ মাস ২৭ দিন জীবনের মধ্যে বিভিন্ন মামলায় প্রায় ৮ বছর ৫ মাস ২৩ দিন জেলে অতিবাহিত করেন। এই জেল জীবনে বঙ্গবন্ধুর খোঁজ খবর নেয়া, তাঁকে জেল থেকে বের করা, আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলার জন্য নেতাকর্মীদের সংগঠিত করা, পরামর্শ দেয়া, নেতাকর্মীরা জেলে গেলে তাদের পরিবারের খোঁজ নেয়া সর্বোপরি নিজের পরিবার সামলানো- এ ছিল এক বিরাট চ্যালেঞ্জ এবং ভীষণ দূর্বিসহ জীবন। তখন বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে কেউ বাসা ভাড়া দিতে রাজি হতো না, দিলেও কিছুদিনের মধ্যে ছেড়ে দিতে হতো। আত্মীয় স্বজনরা পর্যন্ত সম্পর্ক রাখতে চাইতো না পাছে সরকারের রোষানলে পড়তে হয় এই ভয়ে। কিন্তু বঙ্গমাতা এতো সব সমস্যার মধ্যেও কখনো ভেঙ্গে পড়েন নি, হতাশ হন নি বা বঙ্গবন্ধুকে ছেড়ে যান নি। বিশ্বের ইতিহাসে এমন নির্যাতিত-নিপীড়িত নেতার স্ত্রী স্বামীকে ছেড়ে চলেগেছেন এমন প্রমানও আছে। বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছেলেমেয়েদের যথাযথ শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন, আত্মীয় স্বজন, নেতাকর্মীদের খোঁজ-খবর রেখেছেন। তাদের বিপদে আপদে এগিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধুকে জেল থেকে বের করার জন্য বারবার আদালত পাড়ায় ও আইনজীবীর চেম্বারে গেছেন কিন্তু কখনো স্বামীর মুক্তির জন্য স্বৈরাচারী সরকারের সাথে, অপশক্তির সাথে আপোষ করেন নি।

বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা আন্দোলনে ভীত হয়ে স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকার তাঁকে ফাঁসি কাষ্টে ঝোলানোর জন্য আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার করে জেলে পুরে। এদিকে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা নেতাকর্মীদের নিয়ে এমন তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন যার ফলে সরকার বাধ্য হয় বিরোধী দলীয় নেতাদের সাথে গোলটেবিল আলোচনায় বসতে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া সেই গোলটেবিল বৈঠক অর্থহীন হবে বিধায় আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি দিতে চান। এদিকে আওয়ামীলীগের প্রথম সারির নেতারাও বঙ্গবন্ধুর প্যারোলে মুক্তির জন্য রাজি। কিন্তু বাদ সাধলেন বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব। তিনি খবর পেয়ে দ্রুত ছুটে যান জেলে। বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করে তিনি জানতে চান, বঙ্গবন্ধু প্যারোলে মুক্তি নিয়ে জেল থেকে বেরিয়ে আসতেছেন কি না ? বঙ্গবন্ধু জবাবে বলেন, এ ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেই নি। তখন বঙ্গমাতা বঙ্গবন্ধুকে বলেন,- “তুমি মুক্তি পেলে দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশী খুশি হবো আমি। কিন্তু আমি বলছি তুমি প্যারোলে মুক্তি নিয়ে জেল থেকে বের হবে না। সরকার যদি তোমাকে বেকসুর খালাস দেয় তো বের হবে, নতুবা বের হবে না এটা আমার সাফ কথা।” বঙ্গবন্ধু তাঁর কথায় রাজি হলেন, তিনি প্যারোলে মুক্তি নিলেন না। পরে সরকার বাধ্য হয়ে তাঁকে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জেল থেকে মুক্তি দেয় এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি পল্টনে ছাত্রনেতারা তাঁকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেন। সেদিন যদি বঙ্গবন্ধু প্যারোলে মুক্তি নিয়ে জেল থেকে বের হতেন তাহলে হয়তো তিনি জীবনে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হতে পারতেন না।
সত্তরের নির্বাচনের পর পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী যখন ক্ষমতা হস্তান্তরে টাল বাহানা শুরু করে তখন শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালির আন্দোলন সংগ্রাম। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে জাতির উদ্দেশ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারণী বক্তব্য রাখবেন। এ নিয়ে তখন পূর্ব পাকিস্তানে টান টান উত্তেজনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বঙ্গবন্ধুকে বলে দেয়া হয়েছে, তিনি যেন স্বাধীনতা ঘোষনা না করেন। পাকিস্তান সরকার বোমারু বিমান নিয়ে প্রস্তুত বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করলেই রেসকোর্স ময়দানেই বিমান হামলা করবে। এদিকে বাঙালি জাতি উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছেন, বঙ্গবন্ধু কখন আসবেন, কখন স্বাধীনতার ঘোষনা দিবেন। ৭ই মার্চের আগ থেকেই অনেক নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ী, বিরোধীদলীয় নেতা বঙ্গবন্ধুকে পরামর্শ দিচ্ছেন, চাপ দিয়ে যাচ্ছেন- বঙ্গবন্ধু যেন রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এই সময় বঙ্গবন্ধু ছিলেন উভয় সংকটে। রেসকোর্স ময়দানে যাবার আগে বঙ্গবন্ধু তাঁর বেড রুমে গেলেন তাঁর সহধর্মিনী, দুঃখ সময়ের বন্ধু, সাহস ও পরামর্শ দাতা বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছার কাছে। বঙ্গমাতা বঙ্গবন্ধুকে বলেন,“তোমাকে কে কী বলল সে সবে তুমি কান দিও না, তুমি যা ভালো মনে কর তাই বলবে। মনে রাখবে ইয়াহিয়ার বাহিনী প্রস্তুত হয়ে আছে তোমার বক্তব্যের পর পরই বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য।” বঙ্গমাতার এই সতর্ক বাণী বঙ্গবন্ধুকে তাঁর জীবনের সবচেয়ে সংকটময় মুহুর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতায় যে সাহায্য করেছিল তা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে অতি সতর্কতার সহিত বাঙালি জাতিকে পূর্ণ পরিস্থিতি বর্ণনা করলেন, পূর্ণাঙ্গ দিক নির্দেশনা দিলেন এবং কৌশলে স্বাধীনতার ঘোষণাও দিয়ে দিলেন। অথচ পাকিস্তান সরকার বা তাদের মোড়ল যুক্তরাষ্ট্র ও গণচীন বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতা ঘোষনার জন্য দায়ী করতে পারলো না, বাঙালি জাতির উপর ঐ মুহর্তে আক্রমণ করতে পারলো না।

বিধির লিখন না যায় খন্ডন। পাকিস্তানী হায়েনারা ২৫ মার্চ রাতে বাঙালি জাতির উপর অতর্কিত আক্রমণ করে বসে। তবে সেই আক্রমণে পাকিস্তানীরা বিশ্ববাসীর নিকট আক্রমণকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়, বঙ্গবন্ধু বা বাঙালিকে দোষ দিতে পারে নি। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের সেই ভাষণ বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ একশত ভাষণের মধ্যে প্রথম দশে অবস্থান করেছে এবং ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভূক্ত হয়ে বাঙালি জাতির গৌরব বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনী ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী করে রাখে। সেখানে সামরিক আদালতে বিচার করে তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। উক্ত কারাগারে তাঁর জন্য কবরও খুড়েঁ রাখা হয়। আর এদিকে বঙ্গমাতা সন্তানদের নিয়ে এ বাড়ি থেকে ও-বাড়ি আশ্রয় নিতে থাকেন। পরে পাকিস্তানী সৈন্যরা তাঁদের গ্রেফতার করে ধানমন্ডির ১৮নং রোডের ১টি বাড়িতে বন্দী করে রাখে। এই বন্দী জীবনেও তাঁকে দুঃখসহ দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। তারপরও তিনি ধৈর্য হারান নি। একদিকে হাসপাতালে অসুস্থ শয্যাশায়ী শ্বশুড়-শাশুড়ির সেবা করা, সন্তানদের দেখাশোনা, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জৈষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার প্রথম সন্তান জয়ের জন্ম লাভ, পাকিস্তানী সৈন্যদের গঞ্জনা শোনা, অপরদিকে স্বামী ও দু’পুত্র শেখ কামাল ও শেখ জামালের চিন্তায় মগ্ন- এই সময় তাঁকে একটা অমানষিক চাপ সহ্য করতে হয়েছে। দীর্ঘ ০৯ (নয়) মাসের বন্দী অবস্থায় যেকোনো মুহুর্তে তাঁর মৃত্যু ছিল অনিবার্য। এভাবে বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা রেনু শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু, জাতির জনক এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি হতে অবদান রেখেছিলেন।
আবারো কবির ভাষায় বলতে হয়:
‘এ বিশ্বে যাহা কিছু মহিয়ান চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।’
কবির কবিতার সূত্র ধরে বলতে হয় স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে অবদান রেখেছিলেন তাঁর অর্ধেকের দাবীদার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব। এভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে এই মহীয়সী নারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। ইতিহাসের গবেষকরা একদিন নিশ্চয়ই যথাযথভাবে বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের মূল্যায়ন জাতির সামনে তুলে ধরবেন।

৮ই আগস্ট এই মহিয়সী নারীর জন্মদিন। তাঁর ৯১ তম জন্মদিনে এই প্রত্যাশা রইল। এই আগস্ট মাসেই তিনি শাহাদাত বরণ করেন। ১৫ই আগস্টের সকল শহীদানের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।


লেখকঃ মোঃ আব্দুল মালিক শিক্ষক, কলামিস্ট। সহ-সভাপতি বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ, সিলেট জেলা। সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু গবেষণা সংসদ, সিলেট জেলা।

Monday 26 July 2021

নীল সাপেরা ফেসবুকে যেন ফেলিছে নিশ্বাস : সামিল হোসেন

নীল সাপেরা ফেসবুকে যেন ফেলিছে নিশ্বাস : সামিল হোসেন

বাংলাদেশের 'প্রধান কবি' হিসেবে মর্যাদালাভ করা কবি শামসুর রহমানের ‘পণ্ডশ্রম’ কবিতার একটি লাইনে বলেছিলে ''এই নিয়েছে ঐ নিল যাঃ! কান নিয়েছে চিলে'' কবির এই লাইনের সাথে সাদৃশ্য আজ এবং এই সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। বিশেষ করে ফেসবুকে যা যা ঘটে বা ঘটে চলেছে, তার সঙ্গে বেশ প্রাসঙ্গিক চিলের পেছনে খামোখা ছুটা জনগণ। 

উড়ো খবরের পেছনে ছুটে আজ ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সমাজের কোনো অংশের চরম ক্ষতি হয়ে যায়। তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সামাজিকতার সীমানা ছাড়িয়ে যায়। 

একুশ শতকে এসে ভার্চ্যুয়াল জগৎকে অস্বীকার করা বা এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বর্তমানে ফেসবুকের ব্যবহারকারীই ২৩০ কোটির বেশি। তাই এর প্রভাব এতটাই যে গণমাধ্যম বলি আর সামাজিকতা। ফেসবুক এসবকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। 

এই তো বিগত মার্কিন নির্বাচনে ফেসবুকের মাধ্যমে ভুয়া খবর প্রচারিত হয়েছে, সেই প্রভাব পড়েছে নির্বাচনে। সে জন্য মার্ক জাকারবার্গকে হাজিরা দিতে হয়েছে মার্কিন কংগ্রেসে—এ তো পুরোনো খবর। তার পর থেকে ভুয়া খবর ঠেকাতে ফেসবুকের নানা চেষ্টাও শুরু হয়েছে । 

বাংলাদেশেও ফেসবুক কিংবা অনলাইন ভুয়া খবর ছড়ানোর বড় অস্ত্র। এইতো গতকাল আগুন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব প্রচারের অভিযোগে সিলেটের বিভিন্ন স্থান থেকে ৪ ভূয়া সাংবাদিকসহ ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-৯। 

গত ২২ জুলাই মধ্যরাতে সিলেটের আকাশে আগুনে শিখা দেখা যায়। যা দেখে ফেসবুকে অনেকেই প্রচার করেন, সিলেট সেনানিবাসের বহুতল ভবনে আগুন লেগেছে। ভয়াবহ এই আগুনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মিথ্যে এই প্রচারণায় এতে নগরী ও আশপাশের এলাকায় আতংক দেখা দেয়। 

কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এটি কোনো অগ্নিকান্ড নয়, সিলেটের লাক্কাতুরা এলাকায় শেভরনের নিয়ন্ত্রণাধীন গ্যাসক্ষেত্রে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। তাই গ্যাসকূপের অতিরিক্ত ফায়ার ফ্লো হচ্ছে।

এ ঘটনার তো কাল হলো, তবে প্রতিদিনই এরকম হাজারো গুজব না জেনে না দেখে আমরা অনেকেই ছড়িয়ে দেই। কেননা ভুয়া খবরের নীল সাপেরা ফেসবুকে যেন ফেলেছে নিশ্বাস।

তাই কোনো খবরই যাচাই না করে শেয়ার করা উচিত না, বিশেষ করে অনলাইনে তো নয়ই। প্রযুক্তির এই যুগে প্রযুক্তিগত সুবিধা নিয়ে এর অপব্যবহার করা যায় সহজেই। এখন মূলধারার গণমাধ্যমের লেখাও এদিক–ওদিক করে সেই মাধ্যমের লোগো বসিয়ে ছড়িয়ে দেওয়াই সহজ। এমনকি প্রযুক্তি যে পর্যায়ে তাতে ছবি বা ভিডিও বিকৃত করা, চাঁদের মধ্যে কারও মুখাবয়ব জুড়ে দেওয়া কোনো ব্যাপার না। পরে হয়তো প্রমাণিত হবে, সেটি ভুয়া ছিল। সাইবার আইনে মামলাও হয়তো হবে। তাতে কী, ক্ষতি যা হওয়ার তা হবেই। 

তবে কি এখানে ব্যবহারকারীদের কোন দায়িত্ব নেই? হ্যাঁ নিশ্চয়ই ব্যবহারকারীর দায়িত্ব তো আছেই। কোটি কোটি ব্যবহারকারীর সবাই তো আর প্রযুক্তিতে দক্ষ না, কোনটা ভুয়া কোনটা আসল, তা–ও অনেকে বোঝেন না। ভুয়া খবর, ছবি বা ভিডিওকে বিশ্বাস করেন, শেয়ার করে দেন নিজের ফেসবুক প্রোফাইল বা পেজ থেকে। কিন্তু অনেক দায়িত্বশীল ব্যক্তিকেও দেখা যায় মাঝে মাঝে এমন কিছু পোস্ট দিতে বা শেয়ার করতে, যার কোনো সত্যতা নেই। তাই স্হানীয় কিংবা সারাদেশের যে কোন সংবাদ ফেইসবুক পোস্টে বিশ্বাসী না হয়ে খোঁজ নেই মূলধারার স্হানীয় ও জাতীয় সংবাদপত্র। 

চলুন এবার ফিরে যাই কবি শামসুর রহমানের ‘পণ্ডশ্রম’ কবিতায়, কবির এই কবিতার মূল সারাংশ হল : চিলের পেছনে না ছুটে আগে নিজের কানে হাত দিয়ে দেখতে হবে, সেটা জায়গামতো আছে কি না, তা দেখে তার পর ছুটি।