Showing posts with label বিশেষ প্রতিবেদন. Show all posts
Showing posts with label বিশেষ প্রতিবেদন. Show all posts

Saturday, 26 February 2022

চন্দরপুরে ২ সন্তানের জননীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার: হত্যা, নাকি আত্মহত্যা?

চন্দরপুরে ২ সন্তানের জননীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার: হত্যা, নাকি আত্মহত্যা?


বিশেষ প্রতিবেদনঃ গোলাপগঞ্জের চন্দরপুরে দুই সন্তানের জননীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তৈরি হয়েছে রহস্যের ধুম্রজাল। গতকাল (শুক্রবার) রাত ৮টার দিকে শিউলী বেগম নামের ওই গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে গোলাপগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ। সে চন্দরপুর গ্রামের আমকোনী বাড়ির ইকবাল হোসেনের স্ত্রী। তাদের দুটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান রয়েছে।

শিউলী বেগমের পিত্রালয়ও একই এলাকায়। সে লামা-চন্দরপুর গ্রামের হারুন মিয়ার মেয়ে।

দুই সন্তানের ওই জননীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনাটি হত্যা? নাকি আত্মহত্যা? এমন প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয় এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মনে।

ইকবাল হোসেনের পরিবার ঘটনাটি আত্মহত্যা দাবী করলেও বিপরীত দাবী জানিয়েছেন শিউলী বেগমের পরিবার। তাদের দাবী পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের পর ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে শিউলী বেগমের নিথর দেহ।


স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, শিউলী বেগম ও ইকবাল হোসেনের মাঝে পারিবারিক কলহ ছিলো। এমনকি তা তালাক পর্যন্ত গড়ায়। তালাকের ঘটনায় প্রায় দুই মাস শিউলী বেগম তার পিত্রালয়ে ছিলেন। পরবর্তীতে উভয় পরিবার, চেয়ারম্যান-মেম্বার ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সালিশ-বৈঠকের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধান করেন, এমনকি হাসিমুখে গত শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) শিউলী বেগম তার স্বামীর বাড়িতে ফিরেন। সালিশ-বৈঠকে শিউলী বেগম চেয়ারম্যান-মেম্বারগণকে স্বামীর বাড়িতে ফেরার পূর্ণ অনুমতিও দিয়েছিলেন। অথচ, স্বামীর বাড়ি ফেরার এক সপ্তাহের মাথায় (২৫ ফেব্রুয়ারি) রহস্য ঘেরা ঝুলন্ত লাশ হলেন শিউলী বেগম(২৫)।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টায় গোলাপগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ এসে ঘরের দরজা ভেঙ্গে শিউলী বেগমের লাশ উদ্ধার করে। এসময় শিউলী বেগমের নিথর দেহ ফ্যানের সাথে ঝুলছিলো। তবে দু'পা বিছানায় লেপ্টে থাকায় সন্দেহের উদ্রেক দেখা দিয়েছে। এছাড়া শিউলী বেগমের স্বামী ইকবাল হোসেন ও দেবর রাজন আহমদ ঘটনার সময় বাড়িতে থাকলেও পুলিশের আগমন এবং লাশ উদ্ধারের পূর্বে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। এতে এলাকার লোকজনের মাঝে রহস্য ঘনীভূত হয়।

এদিকে ইকবাল হোসেনের পরিবারের দাবী, ইকবাল গত বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ব্যবসার জন্য বড়লেখা উপজেলার দাসের বাজার গিয়েছিলেন। শুক্রবার সন্ধ্যার কিছু পূর্বে সে বাড়িতে ফিরে। তবে ঠিক কি কারণে ইকবাল হোসেন ও রাজন আহমদ ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেলেন তার সদুত্তর মিলেনি।

পরিবার সূত্র আরোও জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যার কিছু পূর্বে ইকবাল হোসেন বাড়িতে আসলে শিউলী বেগমকে তার বন্ধ কক্ষে ডাকাডাকি করেন। এসময় শিউলী বেগম ঘুমিয়ে আছেন মনে করে ইকবাল আবারও বাড়ির বাইরে চলে যান। পরবর্তীতে তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ঘরের ভেতর শিউলী বেগমের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পেয়ে চিৎকার করেন। এসময় আশপাশের লোক জড়ো হলে পুলিশে খবর দেয়া হয়। পরে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার এসআই মোফাখখারুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘরের দরজা ভেঙ্গে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেন।

গোলাপগঞ্জ মডেল থানার এসআই মোফাখখারুল ইসলাম লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, ঘটনাটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা? তা ময়না তদন্তের রিপোর্ট না আসলে বলা যাবে না। লাশের অবস্থা দেখে এটাকে প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলেই মনে করছেন তিনি। তবে ময়না তদন্ত শেষেই ঘটনার সত্যতা জানা যাবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।

এঘটনায় শিউলী বেগমের পিতৃ পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

তবে স্থানীয় এলাকাবাসীর মনে রয়েছে সংশয়। ঘটনাটি হত্যা? নাকি আত্মহত্যা? এ প্রশ্নের সঠিক খোঁজ পেতে প্রশাসনের সর্বাত্মক তৎপরতা কামনা করেন তারা। তবে এ পর্যন্ত ময়না তদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষাই করতে হচ্ছে সবাইকে।

আরোও পড়ুনঃ

Sunday, 19 September 2021

গোলাপগঞ্জে শিক্ষা ও সমাজসেবায় একজন ফজলুল হক ফজলু

গোলাপগঞ্জে শিক্ষা ও সমাজসেবায় একজন ফজলুল হক ফজলু



প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় শিক্ষা ও সমাজসেবায় অনবদ্য ভূমিকা রাখা একজন ফজলুল হক ফজলু। যিনি সুদূর যুক্তরাজ্যে অবস্থান করেও নিজ উপজেলার শিক্ষা উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। 

১৯৯৮ সালে তিনি-সহ উপজেলার যুক্তরাজ্য প্রবাসী শিক্ষানুরাগীরা মিলে প্রতিষ্ঠা করেন গোলাপগঞ্জ উপজেলা এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকে। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা (১৯৯৮) সেক্রেটারী করা হয় ফজলুল হককে। এছাড়া শিক্ষাখাতে অনস্বীকার্য অবদান রাখায় ২০০২ইং সালে আবারও টানা দ্বিতীয়বারের মতো জেনারেল সেক্রেটারী নির্বাচিত হন তিনি। পরবর্তীতে পুরো উপজেলায় শিক্ষার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখায় এ ট্রাস্টের ২০১৫ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত করা হয় তাকে।


একনজরে ফজলুল হক ফজলুঃ

ফজলুল হক ফজলু বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বসবাস করলেও তাঁর পৈতৃক নিবাস সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার বুধবারীবাজার ইউনিয়নের কুশিয়ারা তীরবর্তী চন্দরপুর গ্রামে। চন্দরপুর গ্রামের সভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান তিনি। তাঁর পিতার নাম আব্দুস সাত্তার, মাতা জয়তুরা বেগম। পরিবারের ১৩জন ভাই-বোনের মধ্যে ফজলুল হক ৪র্থ। ব্যক্তিগত জীবনে ফজলুল হক ৩ মেয়ে ও ৩ পুত্রের জনক।

পরিবারের বর্তমান ঠিকানাঃ
ফজলুল হকের পৈতৃক নিবাস চন্দরপুরে হলেও সিলেট নগরীতে রয়েছে তাদের নিজস্ব আবাস। নগরীর আম্বরখানাস্থ জালাবাদ ১০/৭ আর.এ গোলাপকুঞ্জ ঠিকানায় বর্তমানে তাদের পরিবারের লোকজন বসবাস করছেন। তবে গ্রামের সাথে রয়েছে তাদের নিবিড় সম্পর্ক।



শিক্ষাজীবনঃ

ফজলুল হক বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বসবাস করলেও তাঁর জন্ম, বেড়ে উঠা ও শিক্ষাজীবন পার হয়েছে দেশের মাটিতেই। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি হয় পৈতৃক ভূমি চন্দরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর ১৯৭৮ইং সালে চন্দরপুর আল-এমদাদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সহিত এস,এস,সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ালেখার জন্য তিনি ভর্তি হন সিলেট এমসি কলেজে। তবে এখানে কিছুদিন অবস্থান করে নিজেদের বাসা ও ব্যবসার সুবাদে পাড়ি জমান রাজধানী ঢাকায়। সেখানে গিয়ে তিনি মালিবাগের আবু জহুর জিফারী কলেজ থেকে ১৯৮০ইং সালে এইচ এস সি পাস করেন। পরবর্তীতে প্রবাসে পাড়ি জমানোয় তাঁর আর লেখাপড়া করা হয়ে উঠেনি।



প্রবাস জীবনঃ

ফজলুল হক উচ্চ মাধ্যমিক পড়ালেখা শেষ করে ১৯৮২ইং সালে লিবিয়ায় পাড়ি জমান। সেখানে প্রায় ৩বছর ৬মাস মিনিস্ট্রি অব কমিউনিকেশনে চাকুরিরত অবস্থায় দেশে ফিরে আসেন। এরপর আবার ১৯৮৪ইং সালে কুয়েত পাড়ি জমান। সেখান থেকে ১৯৮৬ সালে যুক্তরাজ্যে চলে যান তিনি। সেই থেকে আজ অবধি তিনি যুক্তরাজ্যেই অবস্থান করছেন। বর্তমানে সেখানে তাঁর প্রপার্টি বিজনেস রয়েছে। যা গত ১৮বছর ধরে তিনি একটানা পরিচালনা করে আসছেন।


সংগঠক ফজলুল হকঃ




শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবী ফজলুল হক একজন সফল সংগঠক হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। একজন সংগঠক হিসেবে তিনি ১৯৯৬ সালে ব্রিটিশ-বেঙ্গলী ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ইউকে'র প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন,  বর্তমানে সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। ১৯৯৮ সালে গোলাপগঞ্জ উপজেলা এডুকেশন ট্রাস্ট গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় ছিলেন ফজলুল হক। এছাড়া বুধবারীবাজার ইউনিয়ন ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্ট ইউকে, চন্দরপুর ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইউকে, চন্দরপুর উন্নয়ন সমিতি ইউকে-সহ অসংখ্য সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠায় তাঁর ভূমিকা ছিলো অনস্বীকার্য।





রাজনীতি অঙ্গনে ফজলুল হকঃ




সামাজিক অঙ্গনের পাশাপাশি ফজলুল হকের বিচরণ রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনেও। তিনি ঢাকায় পড়ালেখাকালীন সময়ে সক্রিয় ছাত্ররাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৯৬ সালে যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের (কভেন্ট্রি কনভেনশন হলে) জেনারেল সেক্রেটারি নির্বাচিত হন তিনি। এছাড়া বৃটিশ রাজনীতিতে লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টির সক্রিয় সদস্য হিসেবে ২০০৬ সালে কাউন্সিলর পদে পার্টির মনোনয়ন পেয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।





শিক্ষানুরাগী ফজলুল হকঃ

শিক্ষার উন্নয়নে ফজলুল হকের অবদান অনবদ্য। তিনি গোলাপগঞ্জ এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজ অবধি এ ট্রাস্টের একজন সফল সংগঠক ও সম্মানীত ট্রাস্টি। তিনি দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে এ ট্রাস্টের মাধ্যমে গোলাপগঞ্জ উপজেলাব্যাপী শিক্ষার উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখেন। এর বাইরে তিনি ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসায় সর্বদাই সহযোগিতা করে আসছেন। তিনি আল-এমদাদ উচ্চ বিদ্যালয় ও ডিগ্রী কলেজ ট্রাস্ট ইউকে'র প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি। এছাড়া বিভিন্ন সময় গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদেরও সহযোগিতা করে আসছেন প্রতিনিয়ত।

গোলাপগঞ্জ উপজেলা এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকে'র পক্ষ থেকে শাহজালাল একাডেমির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের হাতে ৫ লক্ষ টাকার চেক প্রদান করছেন গোলাপগঞ্জ এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকে'র সভাপতি ফজলুল হক ফজলু ও সাধারণ সম্পাদক মখন মিয়া (২০১৬)।


 

সমাজসেবী ফজলুল হকঃ





ছাত্রজীবন থেকেই সামাজিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন ফজলুল হক ফজলু। ৮০'র দশকে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ালেখাকালীন তিনি ঢাকায় জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সদস্য ছিলেন। এরপর প্রবাসে পাড়ি জমালেও নিজ মাটির মানুষের সেবায় সর্বদাই কাজ করে আসছেন। কখনও ব্যক্তিগতভাবে, কখনোবা সংগঠনের মাধ্যমে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের সহযোগিতায় হাত বাড়িয়েছেন সবসময়। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনেও হয়েছেন আজীবন দাতা সদস্য। নিজের মরহুমা মেয়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন শিরিন মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ইউকে। এ ট্রাস্টের মাধ্যমে দরিদ্রদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ, শীতার্থ মানুষদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ-সহ বিভিন্ন সামজিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।



এর বাইরেও ফজলুল হক ফজলু অসংখ্য সংগঠনের সাথে রয়েছেন সম্পৃক্ত। তিনি বৃটিশ-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের (BBCC)-এর কর্পোরেট সদস্য। বিভিন্ন ট্রাস্টের আজীবন ট্রাস্টি-সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও খেলাধুলায় পৃষ্টপোষকতা করার পাশাপাশি তরুণদের মাঝে সমাজসেবার প্রতি উদ্দীপনা জাগাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।




Tuesday, 7 September 2021

গোলাপগঞ্জের একজন গীতিকার ফজলুর রহমান ফলু

গোলাপগঞ্জের একজন গীতিকার ফজলুর রহমান ফলু




সিলেট অঞ্চল- সংগীত এবং মরমী কবিদের অঞ্চল নামেই ব্যাপক সমাদৃত। রাধারমণ, শাহ আবদুল করিম, শীতলংশাহ, দ্বীন ভবানন্দ, হাসন রাজা, আরকুম শাহ, দূর্বিন শাহ প্রমুখ বাউল সাধকগণ এ অঞ্চলেরই কৃতি সন্তান। যারা বাংলা সংগীত, বাউল সংগীত রচনা করে সিলেটকে বিশ্বব্যাপী নিয়ে গিয়েছেন অনন্য উচ্চতায়। এ অঞ্চলে পুঁতি রচনা, গীতিকবিতা, বাউল সংগীত কিংবা মরমী সংগীত রচনার ইতিহাস বেশ পুরোনো। কালের বিবর্তনে একের পর এক গীতিকবি, বাউল-মরমী কবিগণ রচনা করেছেন তাদের নিজস্ব সংগীতের সুর।


তেমনি নতুন প্রজন্মের একজন গীতিকার ফজলুর রহমান ফলু। যিনি প্রবাসে ব্যবসায়িক কাজে শত ব্যস্ততার মাঝেও বাংলা সঙ্গীত রচনায় অর্জন করেছেন ব্যাপক জনপ্রিয়তা। দেশ ও বাংলা ভাষার টানে তিনি সুদূর যুক্তরাজ্যে বসবাস করেও বাংলা সংস্কৃতিতে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন সর্বদা। প্রতিনিয়ত রচনা করে চলেছেন অসংখ্য সঙ্গীত। তিনি বাংলাদেশ বেতার সিলেটের নিয়মিত তালিকাভুক্ত একজন গীতিকার। 


গীতিকার ফজলুর রহমান ফলু পরিচিতিঃ

গীতিকার ফজলুর রহমান ফলু'র পৈতৃক নিবাস সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার বুধবারীবাজার ইউনিয়নের কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী লামা-চন্দরপুর গ্রামে। লামা-চন্দরপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান তিনি। তাঁর পিতার নাম মরহুম হাজী চুনু মিয়া, মাতা খায়রুন্নেছা খানম। সিলেটের মুরাদপুর সেনানীবাস সংলগ্ন হাজী চুনু মিয়া ভিলেজ তাঁর পিতার নামেই প্রতিষ্ঠিত এবং কাচা লংকা রেস্টুরেন্টের পরিচালক সমাজসেবী সাইস্তা মিয়ার বড় ভাই তিনি। ৬ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে ফজলুর রহমান ৪র্থ। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ফজলুর রহমান-সহ ৪ ভাই ও ১ বোন যুক্তরাজ্যে, ১ ভাই আমেরিকায় এবং ১ভাই ও ১ বোন দেশে অবস্থান করছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর স্ত্রী ও ১ পুত্র সন্তান রয়েছে।


শিক্ষাজীবনঃ

ফজলুর রহমান ফলু বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বসবাস করলেও তাঁর জন্ম, বেড়ে উঠা ও শিক্ষাজীবন হয়েছে দেশের মাটিতেই। তিনি ১৯৮৮ইং সালে স্থানীয় আল-এমদাদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সহিত এস,এস,সি পরীক্ষায় কৃতকার্য হোন। এরপর ১৯৯০ সালে ঢাকাদক্ষিণ ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। কলেজে পড়ালেখাকালীন তিনি ছাত্র রাজনীতিতেও সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন। তিনি ঢাকাদক্ষিণ ডিগ্রি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এইচ,এস,সি শেষ করে ১৯৯৪ সালে তিনি সিলেট এমসি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হোন। তবে ওইসময়ে অধ্যায়নরত অবস্থায় তিনি যুক্তরাজ্য পাড়ি জমান।


লেখক ফজলুর রহমানঃ

গীতিকার ফজলুর রহমান ফলু ছাত্রছীবন থেকেই লেখালেখিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। আল-এমদাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখাকালীন সময়ে বিদ্যালয়ের মাসিক সংকলনে তাঁর বেশ কিছু লেখা প্রকাশিত হয়েছিলো। এছাড়া ওই সময়েই তাঁর বিভিন্ন ধরণের লেখা লোকাল পত্র-পত্রিকায়ও প্রকাশিত হতো।


প্রবাস জীবন ও গীতিকার হয়ে উঠাঃ

গীতিকার ফজলুর রহমান ফলু এমসি কলেজে অধ্যানরত অবস্থায় যুক্তরাজ্য পাড়ি জমান। যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমানোর পর তিনি বিভিন্ন ধরণের ব্যবসায়িক কাজে জড়িয়ে পড়েন। এসময় প্রবাসের ব্যস্ততায় লেখালখিতে অনেকটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে যায় তাঁর। সর্বশেষ ২০১৫ সাল থেকে তিনি গীতি রচনা শুরু করেন। এরপরের বছর ২০১৬ সালে তাঁর লেখা ৩২টি গান একসাথে 'চ্যানেল এস' প্রকাশ করে। এরপর থেকেই ফজলুর রহমান ফলু ব্যাপক আলোচনায় চলে আসেন। ক্রমান্বয়ে প্রকাশিত হতে থাকে তাঁর এলবাম ও জনপ্রিয় সংগীত। এখন পর্যন্ত তাঁর রচনায় ১৩২টি গান ইউটিউব-সহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর সংগীত রচনার প্রতিভায় ২০১৮ সালে তাকে একজন নিয়মিত গীতিকারের তালিকাভুক্ত করে বাংলাদেশ বেতার সিলেট।


মিউজিক স্টুডিও প্রতিষ্ঠাঃ

গীতিকার ফজলুর রহমান ফলু যুক্তরাজ্যে বসবাস করলেও মন পড়ে থাকে মাতৃভূমির মাটি ও মানুষের প্রতি। সমাজ ও মানুষের সেবায় ফজলুর রহমান ফলু ও তাঁর পরিবারের রয়েছে অবাধ বিচরণ। তেমনি একজন গীতিকার হিসেব সিলেটের সংগীত অঙ্গনের কথা চিন্তা করে নগরীর উপশহরে প্রতিষ্ঠা করেছেন 'এফ আর মিউজিক স্টুডি'। যেখানে সিলেটের প্রতিভাবান শিল্পীদের পাশাপাশি সংগীত চর্চায় সুযোগ পাবেন উদীয়মান শিল্পীরাও।

এব্যাপারে ফজলুর রহমান ফলু জানিয়েছেন, আমি সঙ্গীতাঙ্গনের অনেককেই দেখেছি যারা ঢাকা শহরে গিয়ে সংগীত চর্চা করে থাকেন। মূলত তাদের কথা চিন্তা করেই সিলেটে এ স্টুডিওটি প্রতিষ্ঠা করেছি। যাতে সিলেটের প্রতিভা সিলেটের মাঠিতেই ফুটে উঠে। 

এছাড়াও সিলেটের গীতিকার ও শিল্পীদের মধ্যে যারা আর্থিক অস্বচ্ছলতায় নিজেদের প্রতিভা ফুটিয়ে তুলতে পারছেন না তাদেরকে FR Music Studio-এর পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করা হবে বলেও ঘোষণা দেন ফজলুর রহমান ফলু। যেকোনো প্রয়োজনে এফ আর মিউজিক স্টুডিও-এর নিম্নের নাম্বারে যোগাযোগ করার আমন্ত্রণ জানান তিনি।
মোবাইলঃ ০১৭২৯-২৬৫৫৮০।