বিদেশ যাবেন, কিভাবে কি করবেন?
এমরান মুর্শেদ দোলন
বিদেশের মাটিতে অনেক বিদেশী আন্তরিক ভাবে আমাদের পরিবার, দেশ, সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে চায়। কেউ কেউ জানতে চায় পরিবার ছেড়ে কেন আমরা একাকি বিদেশে পড়ে আছি? আমাদের যখন কেউ বলে, বাংলাদেশ কি গরীব? অনেক কারণ জানি কিন্তু কোনো বিদেশীকে বলার মত যোগ্য মনে করিনা। সহজ ভাবে জেতার জন্য সংক্ষেপে আমার বিশ্বাসে একটি সত্য কথা বলি, আয়তনের তুলনায় মানুষ বেশি। কর্মসংস্থান কম।
ইউরোপের দশের অধিক দেশ হবে যাদের জনসংখ্যা পাঁচ থেকে চল্লিশ লাখের মধ্যে। পর্তুগালের আয়তন বাংলাদেশের হিসেবে অর্ধেক হলেও জনসংখ্যা এক কোটির কম। দ্বিগুণ আয়তনের ভূখন্ড নিয়ে আটারো গুন জনসংখ্যার ভার বহন করছে আমাদের প্রিয় স্বদেশ। তার মানে বর্তমান জনসংখ্যার অর্ধেক হলেও আমি মনে করি আমাদের মোট জনসংখ্যার দশ শতাংশও দারিদ্র্য সীমার নিচে থাকতো না। করোনার পর ফ্লাইট চালু হলে ২০২০ সালের অক্টোবরের ১ তারিখ পর্তুগাল ফিরি। এপোয়েন্টমেন্ট নিয়ে দুই তিন মাসের মধ্যে ভ্যাক্সিন নিতে যাই বৃহৎ আকারের স্থানীয় স্পোর্টস সেন্টারে। এক কোটি জনসংখ্যার দেশে মানুষ ভীড় করে ভ্যাক্সিন নিচ্ছে। আর সেই তারিখেই বাংলাদেশ এক কোটির উপর টিকাদান সম্পন্ন করেছে। আমাদের সামর্থ্যের একটি উদাহরণ মাত্র।
আমাদের দেশের রপ্তানি যোগ্য প্রধান সম্পদ আমাদের দেশের জনশক্তি বলেই আমি মনে করি। এতে আমাদের লাভ দুই দিক থেকে। এক যারা বাইরের দেশে গেল তারা দেশের জন্য রেমিট্যান্স অর্জন করবে। দুই দেশের মধ্যে যারা চাকুরির প্রতিযোগিতায় থাকবে তাদের মধ্যে বেকারত্বের হার কমবে।
এখন আসা যাক বিদেশে যাওয়ার বিষয়। আমি সরাসরি শ্রমশক্তির কথা বলছি।
পৃথিবীটা হচ্ছে তেলা মাথায় তেল দেয়ার মতো সব জায়গায় একই অবস্থা। আমাদের মতো দেশগুলো থেকে লোক নিতে আগ্রহী উন্নত বিশ্বের দেশগুলো। আমাদের দেশের মেধা পাচার হচ্ছে প্রকাশ্যে, আমরাও সাধুবাদ জানাচ্ছি। ফ্রি উচ্চতর শিক্ষা, স্কলারশিপ দিয়ে নিচ্ছে। অনেকে নিজস্ব অর্থায়নে বিদেশে যাচ্ছেন জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নত হওয়ার জন্য। পরিক্ষীত মেধাদের তারা চাকরি ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দিয়ে রেখে দিতে সক্ষম হচ্ছে। কিন্তু আমাদের আপামর শ্রম বাজারের পথ তারা কতটা উন্মুক্ত রেখেছে প্রবেশের জন্য? প্রায় বন্ধ। যাও চাচ্ছে বা নিচ্ছে দাবি দক্ষ কর্মীর। অদক্ষ কর্মী বেশিরভাগ যাচ্ছেন ব্যক্তি উদ্যোগে মাধ্যম ধরে বেশি টাকা দিয়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রতারিত হচ্ছেন বা ন্যায্য মজুরি পাচ্ছেন না। দিন বদলের আশায় বছরের পর বছর শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। এদের ক্ষুদ্র একটি অংশ দীর্ঘ সময় কাজ করে দক্ষতা লাভ করে বা ভাগ্যগুণে সুযোগ পেয়ে একটি অবস্থানে পৌঁছান।
আমরা যারাই বিদেশে যাওয়ার কথা ভাবি প্রথম ভাবি কত টাকা লাগবে, কিভাবে যোগাড় করবো? আমাদের ভাবা উচিত আমি কোন কাজ জানি, এই কাজের সঠিক মূল্যায়ন, উপযুক্ত মজুরি কোথায় পাবো? যদি কোনো কাজে আমার দক্ষতা না থাকে আমার জানার চেষ্টা করা উচিত, আমি যে দেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করছি সেদেশে কোন কাজের চাহিদা আছে, আর কোথা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমি সে কাজে দক্ষতা অর্জন করতে পারবো। আমার পছন্দের দেশে বা আমার অভিজ্ঞতা লব্ধ সেক্টরে সরকারি উদ্যোগে যাওয়ার কোনো পথ আছে কিনা?
আমাদের সরকার ক্রমাগত বিভিন্ন দেশে জনশক্তি পাঠানোর চেষ্টায় আছে। পাশাপাশি আছে সরকার অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সি। বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সরকারের বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে সার্কুলার দিয়ে প্রার্থী যাচাই করে নিয়োগ দিয়ে নিচ্ছে। এই সব জায়গায় প্রথমে যাচাই হবে আপনার কাজের দক্ষতা। কিছু দেশে ভাষা জ্ঞানের ও প্রমাণ চায়। আপনার প্রথম এসব জায়গায় সুযোগ খোঁজা উচিত হবে। আপনার দক্ষতা প্রমাণ হবে আপনার দায়িত্ব, নির্বাচিত হলে আপনার সুযোগ সুবিধার দেন দরবার করবে সরকার।
এই পন্থা অবলম্বন করে ব্যর্থ হলে আপনার দালাল ধরার পথ সব সময় খোলা। কিন্তু আপনি পরিকল্পনা মাফিক দুই বছর চলে দেখুন, আপনি সফল হবেন।
দুনিয়া এখন হাতের মুঠোয়। আপনার বয়স আটারো বছরের বেশি হলে আপনার যদি মধ্যপ্রাচ্য বা সমগোত্রীয় দেশে যাওয়ার জন্য দুই থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা বাজেট হয় প্লিজ প্রচলিত রাস্তায় যাওয়ার আগে একটু সরকারের একটি প্রচেষ্টা পরীক্ষা করে দেখুন।
আপনার মোবাইলের এপ স্টোর থেকে "আমি প্রবাসী" (https://play.google.com/store/apps/details?id=com.thane.amiprobashi) এপটি ডাউনলোড করুন। আপনার মোবাইল নাম্বার দিয়ে রেজিস্টার করুন। ধাপে ধাপে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রশিক্ষণের বিবরণ, প্রয়োজনীয় ফাইল আপলোড করুন।
আপনার প্রোফাইলে সম্পূর্ণ তথ্য আপলোড হলে জব সার্চ অপশনে যান। আপনার জ্ঞান ও দক্ষতার সাথে যেসব চাকুরি মিলে সেসব জবে আবেদন করুন।
এই এপে মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ জব অফার আছে। সরকার অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সি এইসব বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে। তবে নিয়োগ ক্ষেত্রে দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও প্রতারণামূলক তৎপরতা রোধে সরকারের সজাগ দৃষ্টি আছে বলেই মনে করছি। খরচও সরকার নির্ধারিত।। ইউরোপ আমেরিকার নেই, তবে জেনে রাখুন সরকারি মাধ্যমে যদি কোনো সুযোগ আসে সেটাও এখানেই পাবেন। আর আমার বিশ্বাস তার জন্য ও বেশি সময় অপেক্ষা করা লাগবে না। তাই যত তাড়াতাড়ি পারেন এই এপের সব গুলো ধাপ সম্পন্ন করুন। নির্ধারিত ফি প্রদান করে সকল প্রক্রিয়া অনুসরণ করে BMET কার্ড ম্যানেজ করে রাখুন।
এরমধ্যে একটি কাজে দক্ষ হয়ে উঠুন, প্রয়োজনে কোনো প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিন। পবাসে অবস্থানরত বন্ধু পরিজনদের থেকে জানুন কোন ক্ষেত্রে আপনার প্রশিক্ষণ আপনাকে বাড়তি সুবিধা দেবে। প্রশিক্ষণ পরেও প্রবাস গমণের আগ পর্যন্ত রিলেভেন্ট কাজে ব্যস্ত থাকুন। আর যে কাজই জানুন পাশাপাশি ড্রাইভিং পাস লোকের সব কাজে অগ্রাধিকার পাবে বিদেশের মাটিতে, সাথে অতিরিক্ত সুবিধা।
আপনার চেষ্টা অব্যাহত রাখুন, ভাগ্য আপনার প্রতি সুপ্রসন্ন হোক, আপনার সফলতা কামনা করি।
খবর বিভাগঃ
কুশিয়ারা নিউজ