Tuesday 29 March 2022

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি


স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি মো. আব্দুল মালিক বিশ্বব্যাপী অতিমারির সময় ২০২১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি তথা সুবর্ণজয়ন্তীতে সফল প্রবেশ ঘটেছে। এই সময়ে বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভাবমূর্তি অর্জন করেছে। গত ৫০ বছরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে। অবশ্য নেতিবাচক ভাবমূর্তিও আছে। পাকিস্তানি শাসন শোষণের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ সংগ্রাম আর সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। স্বাধীনতা পরবর্তী বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের যে পরিচিতি আর ভাবমূর্তি ছিল সেটি পাল্টেছে বহুভাবে। স্বাধীনতার ৫ দশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতিতে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি যেমন তৈরি হয়েছে তেমনি রাজনীতি ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বে নেতিবাচক ভাবমূর্তি এখনো আছে। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পনের মধ্য দিয়ে সৃষ্ট লাল সবুজের বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে জায়গা করে নেয়। লড়াই সংগ্রাম করে স্বাধীনতা পাওয়া এ দেশটি শুরুতেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে তকমা পায়। ৭০ এর দশকে বাংলাদেশের পরিচিতি ছিল দারিদ্র্য, দুর্যোগ আর রাজনৈতিক অস্থিরতার দেশ হিসেবে। ৭০ এর দশকে স্বাধীন বাংলাদেশকে খাদ্য ঘাটতি, দুর্ভিক্ষ আর প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত এক জনপদ হিসেবে চিনেছে বিশ্ববাসী। কিন্তু গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে আলোচিত হয়েছে। এখনো বাংলাদশ সম্পর্কে আলোচনায় প্রাধান্য পায় ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিকই। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিয়ন স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ড. আলী রীয়াজ বলেন, "বিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটা বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে প্রশংসিত হয় আর সেটা হলো রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার বিষয়। এছাড়া গণতন্ত্রের প্রশ্ন, অর্থনৈতিক সাফল্যের প্রশ্ন এবং ভূরাজনীতিতে বাংলাদেশের ভবিষ্যত অবস্থানের প্রশ্ন এই তিনটি বিষয় ও গুরুত্ব পাচ্ছে।" মি. রীয়াজ আরো বলেন "কোনো দেশেরতো কেবল একটি মাত্র ভাবমূর্তি থাকে না। বিভিন্ন বিষয়ে,,বিভিন্ন সময়ে,বিভিন্নভাবে তার ভাবমূর্তি গড়ে ওঠে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দুটি বিষয় খুব স্পষ্টভাবে আন্তর্জাতিক মহলে আলোচিত হয় তার একটি হচ্ছে গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি। আর দ্বিতীয় বিষয় হলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সাফল্য।" গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিষয়টিও ইতিবাচক ভাবে দেখা হয়। বহির্বিশ্বে সময়ের পরিক্রমায় ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপট আর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও বদলেছে। আশির দশকেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ইমেজ ছিল স্বৈরতন্ত্রের কবলে পড়া বিদেশি সাহায্য নির্ভর একটি দেশ হিসেবে। একটা বড় সময় ধরে দুর্নীতিতে শীর্ষস্থানীয় দেশ ছিল বাংলাদেশ। এই ভাবমূর্তি পরিবর্তন হতেও সময় লেগেছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান বলেন, “বাংলাদেশের উন্নতি এবং উজ্জ্বল ভাবমূর্তী তুলে ধরতে বরাবরই একটা দুর্বলতা রয়েছে। প্রথম থেকেই বাংলাদেশকে দেখানো হতো অত্যন্ত দরিদ্র একটা দেশ হিসেবে। দেশের লোক খাবার পাচ্ছে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বন্যার ছবি। আশি ও নব্বই দশকের মধ্যেই আমরা আমাদের সামাজিক সূচকে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিলাম।" মিস জাহান আরো বলেন, "তখনো বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আগের মতোই ছিল। কিন্তু গত দশ পনের বছরে যখন বাংলাদেশে ক্রমাগত জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়ছে সেটা এখন সবার নজরে এসেছে।" তাঁর মতে, "আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এখন বাংলাদেশের ইমেজ হচ্ছে এটা হয় একটা ডেভেলপমেন্ট মিরাকল নতুবা এটা হচ্ছে একটা ডেভেলপমেন্ট প্যারাডক্স বা উন্নয়নের একটা ধাঁধাঁ।" রোহিঙ্গাদের আশ্রয দান, দুর্যোগ মোকাবেলা এবং শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত। গত ৫ দশকে বাংলাদেশের যেসব অর্জন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে পরিচিত করেছে তার মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের প্রতিনিধি হিসেবে নেতৃত্ব দেয়া, তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উঠে আসা, শান্তিরক্ষা মিশনে ব্যাপক অংশগ্রহণ ইতিবাচক ইমেজ তৈরি করেছে। জঙ্গীবাদ দমনে সাফল্যের দিকটিও প্রশংসা পাচ্ছে। অন্যদিকে ভারতের সহায়তায় স্বাধীনতা অর্জনের পরও সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রেখে এ অঞ্চলে ভূ—রাজনীতিতে একটা নিজস্ব ভাবমূর্তি তৈরি করেছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশ বিচক্ষণতার সঙ্গেই গত কয়েক দশকে ভাল করছে। বাংলাদেশ একসঙ্গে ভারত, চীন, পাকিস্তান ও জাপানের সঙ্গে নানা রকম চাপ থাকা স্বত্ত্বেও সবার সঙ্গে সম্পর্ক রেখে এগিয়ে যাচ্ছে। এটা অনেকের নজরে এসেছে। সাম্প্রতিক যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বাংলাদশের অবস্থান বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের এই প্রাপ্তি সত্যিই গৌরবের।

শেয়ার করুন