Wednesday 16 February 2022

২৬ ফেব্রুয়ারি পর সিলেটে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেওয়া বন্ধ


নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নানা আলোচনা-সমালোচনার মাঝেই দেশে এখন পর্যন্ত প্রথম, দ্বিতীয় ও বুস্টার মিলিয়ে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে ১৭ কোটি ৬৮ লাখ ৬৬ হাজার ৭৮৮ ডোজ। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, সিলেট সহ সারাদেশে প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শেষ হচ্ছে ২৬ ফেব্রুয়ারি। যারা এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ পাননি তাদের বিশেষ টিকাদান ক্যাম্পেইনের আওতায় এনে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

এরপর আর কোনো স্থানেই প্রথম ডোজ না দিয়ে দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজের ভ্যাকসিন প্রয়োগের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আর তাই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অগ্রাধিকার দিয়ে এই সময়ের মধ্যেই প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি শেষ করতে চাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, সরকারিভাবে দেশের ৭০ শতাংশ জনসংখ্যাকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা।
 
এই পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের ১১ কোটি ৯২ লাখ ২১ হাজার ৯৫৩ জনকে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের। এর মাঝে ১০ কোটি ৯ লাখ ১১ হাজার ২১ ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আরও এক কোটি ৮৩ লাখ ১০ হাজার ৯৩২ জনকে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ প্রয়োগ করতে হবে। আর তাই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ২৬ ফেব্রুয়ারি সর্বোচ্চ সংখ্যক জনসংখ্যাকে ভ্যাকসিন প্রথম ডোজ প্রয়োগের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি আমরা সারাদেশে একটি ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন করতে যাচ্ছি। এদিন আমাদের সর্বোচ্চসংখ্যক ভ্যাকসিন দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা আছে। আমরা এই ক্যাম্পেইনে অংশ নিয়ে সবাইকে ভ্যাকসিন নেওয়ার আহ্বান জানাই। এর মাধ্যমে আমাদের প্রথম ডোজ দেওয়ার কাজ সম্পন্ন করা হবে।

সবাইকে ভ্যাকসিন নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পরবর্তী সময়ে আমরা দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজ দেওয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকব। তাই আর দেরি না করে সবাই এসে কোভিডের ভ্যাকসিন গ্রহণ করুন। নিজে সুরক্ষিত থাকুন ও দেশকে সুরক্ষিত রাখুন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে— যারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ও যারা মৃত্যুবরণ করেছিলেন তাদের বেশিরভাগই ভ্যাকসিন নেননি। যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুহার কম। এমন অবস্থায় আমরা সবাইকে আহ্বান করছি ভ্যাকসিন গ্রহণ করে নিজেকে ও দেশকে সুরক্ষিত রাখার জন্য।

যারা এখন পর্যন্ত এক ডোজও পাননি তাদের ২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভ্যাকসিন গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরাও। তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত ১০ কোটির অধিক প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেছি। ২৬ ফেব্রুয়ারির আগে আমরা আরও কিছুদিন সময় পাচ্ছি। আশা করছি এর মাঝেও সামর্থ্যের সবটুকু দিয়েই আমরা সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে পারব। রাজধানীতে ইতোমধ্যেই ভাসমান নাগরিকদের মাঝে ও দোকান কর্মচারীদের আমরা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করছি। অন্যান্য পেশারও যদি কেউ এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন না পেয়ে থাকে তবে তাদের আমরা তা গ্রহণ করার আহ্বান জানাই।
 
আশা করছি আমাদের যে সক্ষমতা তাতে ২৬ ফেব্রুয়ারির আগে আরও অন্তত ৫০ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজের আওতায় নিয়ে আসতে পারবো। তিনি বলেন, এই কয়েকদিনের নিয়মিত ভ্যাকসিন কার্যক্রম শেষে আমরা ২৬ ফেব্রুয়ারি বিশেষ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন দেবো। এদিন আমরা সর্বোচ্চ সংখ্যক জনসংখ্যাকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, ২৬ ফেব্রুয়ারির মাঝেই আমরা প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন প্রয়োগ শেষ করব। এরপরে আমরা দ্বিতীয় ডোজ ও বুস্টার ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগের বিষয়ে জোর দিতে চাই। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) এর পরিচালক ডা. মো. শামসুল হক বলেন, আমাদের ভ্যাকসিনের কোনো সঙ্কট নেই। প্রতিটা কেন্দ্রেই নিয়মিতভাবে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। আশা করছি যারা এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিন নেননি তারা খুব দ্রুতই সেটা গ্রহণ করে নিজেদের সুরক্ষিত করবেন।

এ দিকে বিভিন্ন জেলা পর্যায়েও ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য নেওয়া হচ্ছে নানা রকমের পরিকল্পনা। দেশে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত অন্তত এক ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন ৯ কোটি ৭৬ লাখ ৩৪ হাজার ৭০৯ জন। কিন্তু এই সময়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগে পিছিয়ে ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অধিবাসীরা। তবে এই জেলাতেও বেড়েছে ভ্যাকসিন প্রয়োগের হার। এর আগে, দেশে ২৭ জানুয়ারি প্রথম করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

একই দিন ভ্যাকসিনের নিবন্ধনের জন্য সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন (www.surokkha.gov.bd) সীমিত আকারে উন্মুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে অফিসিয়ালি এই ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে নিবন্ধন শুরু করা হয়। কর্মসূচি উদ্বোধনের একদিন পর অর্থাৎ ২৮ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) প্রাথমিকভাবে ৫৪১ জনকে ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়। এদিন জানানো হয় ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা শুরু হবে জাতীয় পর্যায়ে।

২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পর্যায়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করা হয়। সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে সারা দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এসময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। বিভিন্ন জেলায় ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রমে জড়িত কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

এর পরপরই বিভিন্ন জেলায় ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে ৮ এপ্রিল থেকে ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ শুরু হয়। ২৫ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, ২৬ এপ্রিল থেকে দেশে ভ্যাকসিনের প্রয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমএনসিঅ্যান্ডএইচ শাখার লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক বলেন, ২৩ এপ্রিল থেকে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজের জন্য এসএমএস পাঠানো হচ্ছে না।

২৬ এপ্রিল থেকে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ প্রয়োগ আপাতত বন্ধ করা হচ্ছে। তবে এটি চালু কবে হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতার ওপরে নির্ভর করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দেশে ১৯ জুন থেকে শুরু হতে হয় চীন থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া সিনোফার্মের প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম। রাজধানীর চারটি মেডিকেল কলেজসহ দেশের অন্যান্য ৬৩ জেলায় এক যোগে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু করে সরকার। চীন সরকারের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া এই ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য ১০টি ক্যাটাগরিতে পাঁচ লাখ মানুষকে টার্গেট করা হয়। 

শেয়ার করুন