হীরার প্রতি দুর্বলতা কার না আছে। কিন্তু তা কেনার সামর্থ্য নেই অনেকের। যদি এমন হতো, কোনো হীরার খনিতে গেলেই মিলে যেত হীরা! হ্যাঁ, এমনটাই হচ্ছে আমেরিকায়।
আমেরিকার আরকানসাস স্টেট পার্কে এমনটাই সম্ভব হয়ে উঠেছে। এই পার্কটি অনেকের কাছেই ডায়মন্ডস স্টেট পার্ক নামেও পরিচিত। আরকানসাসের পাইক কাউন্টিতে মারফ্রিজবোরো শহরে প্রায় ৯১১ একর জমিজুড়ে গড়ে উঠেছে এই হীরার পার্ক। যার মধ্যে সাড়ে ৩৭ একর জুড়েই রয়েছে ‘হীরার খনি’।
এই পার্কে যে কেউ প্রবেশ করতে পারে। তবে তার জন্য অনলাইনে বা সশরীরে টিকিট কাটতে হবে। অসংখ্য মানুষ হীরা পাওয়ার আশায় এই পার্কটিতে এসে ভিড় জমান। কারণ, আমেরিকার ওই পার্কে মাটি খোঁড়ার পর হীরার দেখা পাওয়া যায়।
তাই যে কেউ চাইলেই এখানে ঢুকে নিজেদের যন্ত্রপাতি নিয়ে হীরার খোঁজে খোঁড়াখুঁড়ি করতে পারেন। অথবা চাইলে এসব যন্ত্রপাতি ভাড়াও নিতে পারেন। তবে একটি শর্ত রয়েছে। এই পার্কে ব্যাটারি বা মোটরচালিত যন্ত্র নিয়ে ঢোকা নিষিদ্ধ।
শতাব্দীপ্রাচীন ওই পার্কে হীরার খোঁজ চলছে সেই ১৯০৬ সাল থেকে। তখন অবশ্য এর মালিকানা ছিল জন হাডলসটনের কাছে। ১৯৭২ সালে একে স্টেট পার্কের মর্যাদা দেয় আরকানসাস ডিপার্টমেন্ট অব পার্কস অ্যান্ড ট্যুরিজম।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯০৬ সালে ২৪৩ একর খামারবাড়ির জমিতে দুটি অদ্ভুত হীরা খুঁজে পান হাডলসটন। কিন্তু তার পরের মাসেই লিটল রক নামে এক বিনিয়োগকারী গোষ্ঠীর কাছে ওই ২৪৩ একরের একাংশ বেচে দেন হাডলসটন এবং তার স্ত্রী সারা।
জমি কেনার পর এর মান পরীক্ষা করিয়েছিলেন লিটল রক গোষ্ঠীর কর্ণধার স্যামুয়েল এফ রেবার্ন। তারপর থেকে বহুবার ওই জমিতে বাণিজ্যিকভাবে খননকাজ শুরু হলেও তা সফল হয়নি। যদিও ১৯০৭ থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যে জমির উপরিস্তরে ক্ষয়ের পর প্রায়ই তিরিশ ক্যারট বা তার বেশি ওজনের হীরা পাওয়া যেত।
হীরা পাওয়ার খবর হুহু করে ছড়িয়েছিল মারফ্রিজবোরো শহরে। তার খোঁজে ওই জমিতে আশপাশের শহর থেকেও ভিড় বাড়ছিল। কথিত রয়েছে যে, সে সময় হাজার হাজার পর্যটককে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন মারফ্রিজবোরো শহরের হোটেল মালিকেরা।
হীরার টানে ওই জায়গাটি পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। অনেকের দাবি, হীরার খোঁজে আসা পর্যটকেরা ওই জমির আশপাশেই আস্ত একটি তাঁবু শহর গড়ে ফেলেছিলেন। তার নাম দিয়েছিলেন ‘কিম্বার্লি’। পুরোটাই দক্ষিণ আফ্রিকার বিখ্যাত হীরার খনি শহর কিম্বার্লির নামে। যদিও আমেরিকায় কিম্বার্লি শহরের গোড়াপত্তন নিয়ে গল্পে বিশ্বাসী নন অনেকেই। ধীরে ধীরে হীরা খোঁজার উৎসাহীদের সংখ্যাও কমে যায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ওই জমির মালিকানা নিজের হাতে নেয় আমেরিকা সরকার। এরপর গ্লেন মার্টিন নামে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে তাকে সেখানে খননকাজের অনুমতি দেয়। তবে খনিশ্রমিকদের মজুরির ব্যয়বহুল হওয়ায় সে পরিকল্পনা সফল হয়নি। বিশ্বযুদ্ধের শেষে পূর্বতন মালিককে ওই সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয় সরকার। ১৯৫২ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত হীরার খোঁজে সেখানে ভিড় লেগেই ছিল।
১৯৫১ সালে ওই হীরার খনিকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের ভিড়ের ফায়দা তুলতে এগিয়ে এসেছিলেন লেখক তথা প্রোমোটর হাওয়ার্ড এ মিলার এবং তার স্ত্রী মোডিয়ান। দেশজুড়ে প্রচার শুরু করেন তারা। এর ফলও মিলেছিল হাতেনাতে। ভিড় করেছিলেন পর্যটকেরা। ১৯৫৬ সালে ওই গর্ত থেকে ৩৪.২৫ ক্যারট বা ৬.৮৫০ গ্রামের নীল রঙের হীরা খুঁজে পান জন পোলক। এরপর থেকেই এই জায়গা ঘিরে নানা কথা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।
ডায়মন্ডস স্টেট পার্কে মূলত সাদা, পিঙ্গল এবং হলদে এই তিন রঙের হীরা পাওয়া যায়। ’৭২ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত সেখানে ৩৩ হাজার ১০০টি হীরার সন্ধান মিলেছে। তবে আপনার যদি হীরা খুঁজতে ভালো না লাগে, তবে এই পার্কটিতে ঘুরেও আসতে পারেন। কারণ, পার্কে হীরার খনি ছাড়াও পিকনিক করার ব্যবস্থা রয়েছে। তাঁবু খাটিয়ে সময় কাটানোর জন্য ৪৭টি নির্দিষ্ট জায়গাও রয়েছে। রয়েছে গিফট শপ এবং ওয়াটার পার্কও।
খবর বিভাগঃ
কুশিয়ারা নিউজ