Tuesday, 1 February 2022

মৌলভীবাজারে আমেরিকায় পড়তে যাওয়ায় ঝর্ণা'র পরিবার ‘সমাজচ্যুত’


মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের মেয়ে ঝর্ণা চৌধুরী। তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য আমেরিকায় পাড়ি জমান গত ২৬ ডিসেম্বর।

ঝর্ণা অভিযোগ করেছেন, তাকে বিদেশ পাঠানোয় দেশে তার পরিবারকে সমাজচ্যুত করেছে স্থানীয় মসজিদ কমিটি।

এই অভিযোগ লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে দিয়েছে ঝর্ণার পরিবার।

ইউএনও জানিয়েছেন, এ ঘটনায় মসজিদ কমিটিকে সতর্ক করা হয়েছে। আর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বলেছেন, বিষয়টা ভুল বোঝাবুঝি।

ঝর্ণার বাবা আব্দুল হাই চৌধুরী সোমবার ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।

তাতে বলা হয়েছে, ঝর্ণা ২০০৮ সাল থেকে বিভিন্ন সামাজিক কাজে যুক্ত ছিলেন। একটি সামাজিক সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কও ছিলেন তিনি। নারী অধিকার নিয়ে তিনি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। এ কারণে এলাকার কিছু মানুষের বিরাগভাজন হন ঝর্ণা।

আব্দুল হাই জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝর্ণার নামে কুৎসা রটান কিছু লোক। এ ঘটনায় শাহপরাণ থানায় জিডিও করেছিলেন ঝর্ণা। পরে গত ২৬ ডিসেম্বর উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকা চলে যান।

অভিযোগে আরও বলা হয়, আমেরিকায় অবস্থানরত ঝর্ণার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে এলাকায় নানা অপবাদ প্রচার করে একটি গোষ্ঠি। বলা হয়, ঝর্ণা নাস্তিক হয়ে গেছেন। এরপর স্থানীয় মসজিদ কমিটি সভা ডেকে আব্দুল হাইয়ের পরিবারকে সমাজচ্যুত করার ঘোষণা দেয়। এ ঘটনায় তিনি সামাজিকভাবে চাপে আছেন।

এ বিষয়ে কথা হয় যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ঝর্ণার সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘গত ২৬ ডিসেম্বর আমি উচ্চ শিক্ষার জন্য আমেরিকায় আসি। ২৭ ডিসেম্বর থেকে স্থানীয় একটি মৌলবাদী গোষ্ঠি ফেসবুকে আমাকে নিয়ে কুৎসা রটাতে থাকে। বিদেশ গিয়ে ছোট কাপড় পরছি, নাস্তিক হয়ে গেছি- এই সেই নানা কিছু গল্প তারা তাদের মতো বানাতে থাকে।

‘পরদিন শুক্রবার স্থানীয় ভাটেরা বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটি আমার বাবা আব্দুল হাইকে সালিশ বৈঠক ডাকেন। গুরুতর অসুস্থ থাকায় বাবা যেতে পারেননি। তাই ক্ষিপ্ত হয়ে মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মাখন মিয়া ও সম্পাদক আমিন মিয়ার নির্দেশে আমার পরিবারকে এক ঘরে করে দেয়া হয়।’

ঝর্ণা আরও বলেন, ‘অতি উৎসাহী কিছু মানুষ স্থানীয় মসজিদে আমাকে নিয়ে বিচার ডাকেন। আমার বাবাকে সেই বিচারে উপস্থিত হতে বলেন, কিন্তু ৭০ বছর বয়সী আমার বাবা ইতোমধ্যে তিনবার স্ট্রোক করেছেন। চিকিৎসক বিশ্রামে থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন।’

ঝর্ণা জানান, এ খবর পেয়ে তিনি মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি আমিন মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

ঝর্ণা বলেন, ‘আমি তাকে জিজ্ঞেস করি আমার বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ কী? জবাবে তিনি জানান, আমি আমেরিকায় এসে আমার এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বী একজনকে বিয়ে করেছি, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তাছাড়া আমার বাবা কেন তাদের নির্দেশ মানেননি, তাই আমার পরিবারকে এক ঘরে করে দেয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এটি সমাধান হয়ে যাবে।’

কুলাউড়ার ইউএনও এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, ‘সামাজিকভাবে যেন কোনো ধরনের হয়রানি না করা হয়, তার জন্য অভিযোগ পাওয়ার পরেই আমি কমিটিকে সতর্ক করে দিয়েছি।

‘সেই সঙ্গে আগামী ৯ তারিখ তাদেরকে অফিসে আসতে বলেছি। স্থানীয় চেয়ারম্যানকেও বলেছি বিষয়টি আজই দেখে দিতে। ঝর্ণার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় থানাকেও অবগত করেছি। ঝর্ণার বাবার সঙ্গে আমি আলাপ করেছি। তিনিও আশ্বস্ত হয়েছেন।’

শেয়ার করুন