র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সে দেশে আইনজীবী নিয়োগ করবে সরকার। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যথাযথ প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছে। সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। বৈঠকের কার্যবিবরণী অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের দূতাবাস গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।
যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে মন্ত্রণালয় জানায়, শ্রম আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও মানবাধিকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ক্রমাগত চাপ দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা বাতিল করার পর বাংলাদেশ একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও, পুনরায় সে সুবিধা চালু হয়নি। বৈঠকে বলা হয়, গত ২০ বছরে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে কোনো দ্বিপাক্ষিক সফর হয়নি।
তবে এ বছর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে উচ্চ পর্যায়ের সফর আয়োজনের জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান গণমাধ্যমকে বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা বলেছি সেখানে আমাদের দূতাবাস আগে থেকে কেন জানতে পারেনি? তারা তাদের মতো ব্যাখ্যা দিয়েছে। তারা বলেছে যে করোনাভাইরাসের কারণে গ্যাপ তৈরি হয়েছিল।'
তিনি বলেন, 'আমরা আগেই লবিস্ট নিয়োগ করার জন্য বলেছিলাম। সেটা নিয়ে কাজ করেছে। এর বাইরে পিআর ফার্ম, আইনজীবী নিয়োগের কথাও বলেছে। আমরা এ বিষয়ে বলেছি যে যা যা করার করুক। ফান্ড লাগলে বলুক।' আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে গত ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র 'গুরুতর' মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশের র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমদসহ বাহিনীর ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এদিকে ভবিষ্যতে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে সতর্ক থাকতে বলেছে সংসদীয় কমিটি।
কমিটির সভাপতি বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র একটা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ রকম আরো আসতে পারে। দেখা গেল ইউরোপীয় ইউনিয়নও দিলো। এজন্য আগে থেকে তৎপর হতে হবে।' এ ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে স্বরাষ্ট্র, বৈদেশিক কর্মসংস্থানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বাংলাদেশ ও দেশটির অভিন্ন বন্ধুদের কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছে সংসদীয় কমিটি। এ বিষয়ে ফারুক খান বলেন, 'জাপান, ভারত, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব আমাদের বন্ধু। এই দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রেরও ভালো সম্পর্ক। নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তাদের কাজে লাগানোর জন্য আমরা পরামর্শ দিয়েছি।
মন্ত্রণালয় এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে।' এ ছাড়া সংসদীয় কমিটি বিভিন্ন দেশে নিখোঁজ হওয়া বা গুম বিষয়ে কোনো বৈশ্বিক ইনডেক্স থাকলে তা সংগ্রহ করার কথা বলেছে। অন্য দেশের সঙ্গে তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান কোন জায়গায় তাও নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে।
ফারুক খান বলেন, 'আগামী এপ্রিল মাসে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেটের মধ্যে মিটিং হবে। এর আগে মার্চ মাসে ৩টি সংলাপ হবে। এসব জায়গায় নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য বলেছি।বৈঠকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট সেবা সহজ করতে পাসপোর্ট অধিদপ্তরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য আলাদা উইং খোলার সুপারিশ করা হয়। সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের মিশনগুলোকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য তৎপর থাকার সুপারিশ করা হয়।
এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মতো করে অন্য দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কি না, বাংলাদেশের বিপরীতে অন্য কোনো দেশের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কি না, তা আগামী বৈঠকে বিস্তারিতভাবে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়। ফারুক খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, মো. আব্দুল মজিদ খান, মো. হাবিবে মিল্লাত ও নাহিম রাজ্জাক এ বৈঠকে অংশ নেন।
খবর বিভাগঃ
কুশিয়ারা নিউজ