মৃত্যু এক অমোঘ নিয়ম। জগতের এই অমোঘ নিয়মে দূর আকাশে হারিয়ে গেলেন গোলাপগঞ্জ তথা সিলেটের রাজনীতির এক উজ্জল নক্ষত্র এডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী। নিজের কর্মময় আলোকিত জীবনের মাধ্যমে আলোকবর্তিকা হয়ে তিনি থাকবেন পুরো সিলেটের মানুষের মাঝে।
জাগতিক সব অধ্যায় থেকে চির প্রস্থান করলেও মানুষের মনের হীরক দ্যুতিতে চিরদিন জ্বলে থাকবেন এ কীর্তিমান মানুষ। ক্ষণজন্মা এই উজ্জ্বল নক্ষত্রের বিদায়ে গোলাপগঞ্জসহ পুরো সিলেট জুড়ে দলমত নির্বিশেষে সবার মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
তাঁর প্রস্থানে সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে শূণ্যতা তৈরি হয়েছে তা নিঃসন্দেহে অপূরণীয়। তবুও মৃত্যুতে কারো হাত নেই, সব মৃত্যুই সুনির্দিষ্ট। এই চরম সত্যটা আমাদের মেনে নিতে হয়।
রাজনৈতিক জীবন: বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ ১৯৪২ সালের ১৭ জুলাই গোলাপগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। মিছিলে অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। শিক্ষা জীবনে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে সক্রিয় ছাত্র রাজনীতি করেন। আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মতিয়া চৌধুরী, তোফায়েল আহমদের মতো জাতীয় নেতারা ছিলেন তার রাজনৈতিক সহযোদ্ধা।
ইকবাল আহমদ চৌধুরী ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হন। এর আগে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি প্রথম দফায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হন। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ইকবাল আহমদ চৌধুরী ২০০৪ সালে গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। এরপর আমৃত্যু সে দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
তিনি স্কাউটসে বিশেষ অবদানের জন্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ রৌপ্যপদক লাভ করেন। ১৯৫০-৬০ এর দশকে প্রগতিশীল ছাত্রনেতাদের মধ্যে অন্যতমদের একজন ছিলেন ইকবাল আহমদ চৌধুরী। ১৯৬২ সালে আইয়ুব শাসনবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ১৯৬৪-এর শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ৬ দফা আন্দোলনের পথ বেয়ে ১৯৬৯-এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সম্মুখ সারির নেতা হিসেবে নিজের স্থান করে নিয়েছিলেন । অপার সংগ্রামী পথ ধরে ঢাকার কেন্দ্রীয় ছাত্র নেতৃবৃন্দের বন্ধুত্বে-ভালোবাসায় সিক্ত হোন।
বহুবিধ প্রতিভার অধিকারী, মানবকল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ, উচ্চ শিক্ষার অনুরাগী, বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী সিলেট জেলার অন্তর্ভুক্ত গোলাপগঞ্জ উপজেলার রফিপুর গ্রামে ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন।
বর্তমানে তিনি গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এনইইউবি)-এর চেয়ারম্যান (বোর্ড অব ট্রাস্টিজ) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী ইচ্ছে করলেই ষাটের দশকে রাজধানী ঢাকা শহরে চাকচিক্যময় জীবন সাজাতে পারতেন, সেই সুযোগ ও সম্ভাবনা তাঁর সামনে পূর্ণমাত্রায় ছিল। কিন্তু লালিত স্বপ্ন ও প্রতিজ্ঞার প্রতি সম্মান দেখাতেই নিজের জীবন নিবেদিত করেছেন সমাজপ্রগতি ও মানুষের কল্যাণে।
অবদান রেখে চলেছেন বিভিন্ন শিক্ষামূলক ও মানবকল্যাণমূলক কাজে। ১৯৯৮ সালে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নয়নের প্রয়াসে নিজেকে নিবেদিত করেন ‘নর্থ ইস্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল’ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোক্তা ও পরিচালক হিসেবে, যেখানে স্বল্প খরচে ছাত্র-ছাত্রীরা এমবিবিএস পড়াশোনা করার সুযোগ পাচ্ছে এবং সাধারণ মানুষ স্বল্প মূল্যে পাচ্ছে চিকিৎসাসেবা।
ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষানুরাগী ও মধ্যবিত্তের উচ্চশিক্ষা অর্জনের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে এডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী ২০১২ সালে ‘নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এনইইউবি) প্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান এবং দরিদ্র অথচ মেধাবী শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ।
পরিশেষে বলি সব বিদায় বিদায় নয়; আপনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায়। মহান আল্লাহ পাক আপনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুন, আমীন।
সৌজন্যেঃ সিলেট প্রতিদিন
খবর বিভাগঃ
কুশিয়ারা নিউজ
গোলাপগঞ্জ
শোক সংবাদ