কোভিড টিকা দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে বশির আহমদ (২৪) নামে এক বাংলাদেশি যুবককে গলা কেটে হত্যা করেছে সৌদিআরবে কর্মরত পাকিস্তানি শ্রমিকরা।
রোববার রাতে সৌদিআরবের আল কাসিম শহরের বুরাইদা এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার রাতে বিষয়টি জানাজানি হয় নিহত প্রবাসী বাংলাদেশী যুবকের বাড়িতে।
বাংলাদেশী যুবক বশির আহমেদ কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার পৌর এলাকার তুলাতলী গ্রামের মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় পাঁচ বছর আগে কর্মের তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান ৪ ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট বশির আহমেদ। সেখানের একটি কোম্পানিতে কাজ করতেন বশির। ওই কোম্পানিতে পাকিস্তানি কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় তার।
বন্ধুত্বের সুবাদে কোম্পানির একটি ক্যাম্পে তারা একসঙ্গে থাকতো। রোববার রাতে পাকিস্তানি বন্ধুরা ওই শহরের কোনো এক নির্জন জায়গায় নিয়ে গলা কেটে হত্যা করে তাকে। রাতে ক্যাম্পে না ফেরায় নিকটবর্তী থানায় যোগাযোগ করে বশিরের আত্মীয়-স্বজন। পরে সৌদি পুলিশ এ ঘটনায় এক পাকিস্তানি যুবককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বশিরকে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে ওই পাকিস্তানি যুবক।
এ ঘটনায় পুলিশ এক বাঙালিসহ দুই পাকিস্তানি যুবককে আটক করেছে বলে জানা গেছে।
বশিরের বড় ভাই সৌদি প্রবাসী মোজাম্মেল হক জানান, তারা যে ক্যাম্পে থাকতো রোববার রাতে পাকিস্তানি কয়েকজন শ্রমিক তাকে কোভিড টিকা দেওয়ার কথা বলে রুম থেকে ডেকে নেয়। ওই রাতে পাকিস্তানিরা রুমে ফিরলেও ফিরেনি আমার ভাই। তার রুমে থাকা অন্যরা আমার ভাই সম্পর্কে জানতে চায় পাকিস্তানিদের কাছে। তখন ওই পাকিস্তানিদের কেউ বলে হাসপাতালে আছে, আবার কেউ বলে বন্ধুর রুমে আছে। তাদের কথায় গড়মিল থেকে পরদিন সোমবার বিকালে ওই রুমে থাকা অন্যরা পুলিশে ঘটনাটি জানায়। মঙ্গলবার সকালে পুলিশ দুই পাকিস্তানি ও এক বাঙ্গালী যুবককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তারা গলা কেটে হত্যা করার বিষয়টি নিশ্চিত করে।
মোজাম্মেল আরও জানান, আমার ভাই কয়েক মাস বাড়িতে টাকা পাঠায়নি। তার কাছে অনেকগুলো টাকা ছিল। ওই টাকার লোভে আমার ভাইকে গলা কেটে হত্যা করেছে পাকিস্তানিরা।
নিহতের পিতা ছিদ্দিকুর রহমান জানান, আমার ছেলে প্রতিদিন কয়েকবার বাড়িতে ফোন করতো। রোববার রাত থেকে আমার ছেলে ফোন করে না। সোমবার আমরাও ফোনে কথা বলার জন্য চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু সংযোগ পাচ্ছিলাম না। মঙ্গলবার রাতে জানতে পারি আমার ছেলেকে পাকিস্তানিরা গলা কেটে হত্যা করেছে।
এদিকে বুধবার নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শোকের মাতম। মাতা কমলা বিবি চিৎকার দিয়ে বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন। নিহতের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসীর ভিড় জমাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আশরাফুন নাহার জানান, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। নিহতের পরিবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আর্থিক সহায়তা পাওয়ার জন্য আমরা সহযোগিতা করবো।
খবর বিভাগঃ
কুশিয়ারা নিউজ
প্রবাসের খবর