মুখে মাস্ক, চোখে আনন্দের ঝিলিক। মনে উচ্ছ্বাস! অতি সংক্ষেপে এই হচ্ছে আজ সিলেটের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর চিত্র। এই আনন্দ নিজের অতি প্রিয় ক্যাম্পাসে ফেরার, আবারও ক্লাস করতে পারার।
শুধু যে শিক্ষার্থীদের মধ্যেই এই উচ্ছ্বাস বিরাজমান, তা নয়। বরঞ্চ শিক্ষক-শিক্ষিকারাও ভাসছেন অন্যরকম এক আবেগে।
দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর পর আজ রোববার থেকে সিলেটসহ সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে গেল বছরের মার্চে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ঘোষণার পর গেল প্রায় এক সপ্তাহ ব্যস্ত সময় পার করেছেন সিলেটের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মকর্তা, কর্মচারীগণ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধুয়েমুছে পরিষ্কার করা, স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা করা, করোনা বিষয়ক সচেতনতামূলক পোস্টার লাগানোসহ বিভিন্ন কাজে তারা ব্যস্ত ছিলেন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া নিয়ে গেল শুক্রবার সিলেটে এসে জরুরি বৈঠক করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। এছাড়া গতকাল শনিবার সিলেটে আসেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ গোলাম ফারুক। স্থানীয় শিক্ষা প্রশাসনও একের পর এক বৈঠক করেছে।
আজ রোববার সিলেটের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস ঠের পাওয়া গেছে।
মুখে মাস্ক পরে সকালে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকারা হাতে ফুল নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন শিক্ষার্থীদের। তারা আসার পর ফুল দিয়ে বরণ করা হয় তাদেরকে। একইসাথে মাপা হয় তাদের শরীরের তাপমাত্রা। ব্যবস্থা ছিল হাত ধোয়ারও।
লাইন ধরে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। শ্রেণিকক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষার্থীদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদেরকে নতুন ড্রেস পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে দেখা গেছে। এমনকি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একই রঙের নতুন কাপড় পরিধান করতে দেখা গেছে।
সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শামীমা চৌধুরী বলছিলেন, ‘উন্মুখ হয়ে থাকা শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরেছে। সবার মধ্যে অন্যরকম এক উচ্ছ্বাসের আবহ। সরকারি সব নির্দেশনা মেনে আমরা কলেজ খুলেছি।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বায়োজিদ খান জানান, প্রাথমিকে ১৬টি নির্দেশনা মেনে ক্লাস চলবে। এ বিষয়ে সকল স্কুলের প্রধানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শিশুদের সুরক্ষার বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল মান্নান খান বলেন, ‘আজকের দিনটি অন্যরকম। এতো দিন শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস করেছে। আজ থেকে সবাই সশরীরে ক্লাসে ফিরেছে। তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নতুন সিলেবাস ও রুটিন করা হয়েছে।’
তিনি জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারি নির্দেশনা মানা হচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে তদারকি থাকবে তাদের।
প্রসঙ্গত, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, আপাতত স্বাস্থ্যবিধি মেনে থেকে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থী, পঞ্চম, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির প্রতিদিন এবং প্রথম থেকে চতুর্থ ও ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে সপ্তাহে একদিন ক্লাস নেওয়া হবে।
চলতি বছরের শেষভাগে এসএসসি ও এইচএসসির পাশাপাশি পঞ্চমের প্রাথমিক সমাপনী, অষ্টমের জেএসসি-জেডিস এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
খবর বিভাগঃ
শিক্ষাঙ্গন
সিলেট