হিরো আলমকে নিয়ে উল্টা-পাল্টা কথা বলায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার নিভৃত পল্লীর শ্যামল চন্দ্র বর্মণ (৩০) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইউটিউবসহ ইন্টারনেট দুনিয়ায় ভাইরাল যুবক এখন বিব্রত। হিরো আলম মামলা করার হুমকি দেওয়ার পর থেকে শ্যামল আর কারও সাথে তেমন কথা বলছেন না। বিষয়টি নিয়ে শ্যামলের সঙ্গে কথা হয়। শ্যামলের দাবি, ভাইরাল হওয়ার পর তাকে অনেক ইউটিউবার নানাভাবে চাপে ফেলে ভুলভাল ভুঝিয়ে ভিডিও বানিয়েছে। তাকে দিয়ে গান গাইয়েছেন।
শ্যামল বলেন, আমি কিছু বুঝি নাই। আমাকে নানা কিছু বোঝানো হয়েছে, যা ইচ্ছা তাই শেখানো কথা বলানো হয়েছে। তিনি বলেন, আমি ফেসবুক বুঝি না। এমনকি হিরো আলমকে চিনি না। হিরো আলম মামলার হুমকি দেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে আমি নিজেও এখন বিব্রত।
হিরো আলমকে নিয়ে যে ব্যক্তি ভিডিও বানিয়েছেন, তার সঙ্গে শ্যামল যোগাযোগ করেছেন। তারা ওই ভিডিওটি নাকি ডিলিট করবে না। তাছাড়া শ্যামলকে তারা হুমকি দিয়েছেন। শ্যামল যদি তাদের কথামত কাজ না করেন, তাহলে তারা শ্যামলের খারাপ কিছু করবেন। এনটাই অভিযোগ করলেন শ্যামল।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল 'সি ইউ নট ফর মাইন্ড' খ্যাত শ্যামল একটি ফেসবুক লাইভে এসে বেশ কিছু কথা বলেন। সেই লাইভে আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের কাছে একটি বিষয়ে মাফ চাইতে এসব কথা বলেন শ্যামল। শ্যামল দাবি করেন, তাকে ব্যবহার করে ইউটিউবাররা ফায়দা নিচ্ছে। তারাই তাকে গান গাওয়ানোর মতো কাজ করিয়েছে। এমনকি সোশ্যাল 'হাইপ' তোলার জন্য হিরো আলমের দিন শেষ, শ্যামলের বাংলাদেশ এ রকম কথাবার্তা বলানো হয়েছে বলে জানান শ্যামল।
তিনি বলেন, হিরো আলম ভাইয়ের সাথে আমার কোনো শত্রুতা নাই। হিরো আলম ভাই আমার এলাকার লোক। আমি তার ছোট ভাই। আমি তাকে বড়ভাই বলে ডাকি। আমি হিরো আলম ভাইকে বলবো অবশ্যই আমাকে মাফ করে দিবেন। আমি জেনে শুনে কাজটি করি নাই। তিনি আরও বলেন, আমি একজন গরীব মানুষ। আপনি মামলা করলে আমার বাড়িঘর বিক্রি করেও আমি মামলা চালাতে পারবো না।
অপরদিকে ইউটিউবার ভাইদের কাছে তিনি অনুরোধ করে বলেন, আপনাদের কাছে হাতজোড় করে অনুরোধ করছি আজকের পর থেকে কোন ইউটিউবার আমাকে নিয়ে কোন রং তামাশা করবেন না। কোন খারাপ কিছু বিষয়ে আমাকে ইউজ করবেন না। আমি কয়েকদিন ধরে খুব টেনশনে আছি।
শ্যামল চন্দ্রের বাবার নাম নেপাল চন্দ্র। তিনি মাছ ব্যবসায়ী। মা শেফালি রানি গৃহিণী। তিন ভাইয়ের মধ্যে শ্যামল সবার বড়। ছোট ভাই কমল চন্দ্র ও রাজা চন্দ্র বাবার সঙ্গে মাছের ব্যবসা করেন। শ্যামল চন্দ্র ২০০৫ সালে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাঠগড়া দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি অকৃতকার্য হন। এরপর অর্থাভাবে আর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি।
মাধ্যমিকে অকৃতকার্য হওয়ার পর গ্যাস লাইটারের ব্যবসা শুরু করেন শ্যামল। পাইকারিভাবে গ্যাস লাইটার কিনে দোকানে দোকানে বিক্রি করতেন। আয়ের টাকায় সংসার চলত না বলে ব্যবসা ছেড়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে বামনডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনে কাজ নেন তিনি। চার বছর ধরে সেই কাজই করছেন। মেসার্স এমএম ট্রেডার্সের অধীনে বামনডাঙা রেলস্টেশনে ২০১৮ সাল থেকে তিন হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন।
ছোটবেলা থেকেই শ্যামল সহজ-সরল ও সৎ। চলনবলন ও কথাবার্তায়ও রয়েছে তার সরলতার ছাপ। সম্প্রতি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পুটিমারী গ্রামে বিয়ে করেন শ্যামল। আলোচনায় আসার পর তার বিয়ের খবরও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ গণমাধ্যমেও ফলাও করে প্রকাশ হয়েছে।
শ্যামল রায়ের ‘সি ইউ নট ফর মাইন্ড ও ‘হ্যাভ অ্যা রিল্যাক্স’ সোশ্যাল প্ল্যাটফরমে ভাইরাল হয়। দেশের নেটিজেনদের কাছে শ্যামল নামটি অপরিচিত নয়। শ্যামল আরটিভি নিউজকে বলেন, আমি ছোট-বড় ‘এ্যাভরিথিং’ যারা আছে, আমি সবাইকে সম্মান দিয়ে কথা বলি। আমি আগে থেকেই এমন।
খবর বিভাগঃ
বাংলাদেশ