Monday 9 August 2021

শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টাকারীদের মৃত্যুদণ্ডঃ গুলি বা ফাঁসিতে ঝুলানোর রায়



গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় ১০ আসামির সবার মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে।

এই রায়ে বিচারিক আদালতের দেওয়া মৃত্যদণ্ডাদেশের (ডেথ রেফারেন্স) অনুমোদন দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকরে বিচারিক আদালতের দেওয়া আদেশ পরিবর্তন করে দিয়েছেন। 

ঢাকার ২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মমতাজ বেগম ২০১৭ সালের আগস্টে এ মামলার রায়ে ‘হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত নির্ধারিত পদ্ধতিতে গুলি করে’ ১০ আসামির দণ্ড কার্যকর করতে বলেছিলেন।

আসামিদের ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ এবং আসামিদের আপিল ও জেল আপিল খারিজ করে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ চলতি বছর ১৭ ফেব্রুয়ারি আসামিদের সবার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।

সোমবার প্রকাশিত ৮৬ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চাইলে যেকোনো পদ্ধতি (ফায়ারিং স্কোয়াডে বা ফাঁসে ঝুলিয়ে) অনুসরণ  করে দণ্ডিত ১০ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করতে পারবে।

এর ব্যাখ্যায় উচ্চ আদালত বলেছে, গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নজির যেহেতু খুব একটা দেখা যায় না, সেক্ষেত্রে আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উভয় পদ্ধতির যে কোনো একটি অনুসরণ করে তা কার্যকর করতে পারে।

ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৬৮ ধারায় বলা হয়েছে, আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে আমৃত্যু ফাঁসিতে ঝুলিয়ে। আর ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩৪ (ক) ধারায় বলা হয়েছে, এ আইনের অধীনে মৃত্যুদণ্ড হলে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে অথবা মৃত্যু পর্যন্ত গুলি চালিয়ে তা কার্যকর করা যাবে।

তবে বাংলাদেশে ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কোনো নজির নেই। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়ে জজ আদালত আসামিদের ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে বললেও হাইকোর্ট তা বদলে দিয়েছিলেন। 

সে প্রসঙ্গ তুলে ধরে কোটালীপাড়ার মামলায় হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে একমাত্র বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় উভয় পদ্ধতির যে কোনো একটি অনুসরণ করার কথা বিচারিক আদালত আদেশ দিয়েছিলেন।

কিন্তু ফায়ারিং স্কোয়াডে জনগণের উপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিধান ফৌজদারি কার্যবিধি আইনে না থাকায় হাইকোর্ট বিভাগ ওই আদেশ পরিবর্তন করে শুধু দণ্ডিত ব্যক্তির গলায় রশি ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দেন।

হাইকোর্ট বলেছেন, বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩৪এ ধারায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দু’ধরনের পদ্ধতি থাকলেও বর্তমান মামলায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণপূর্বক দণ্ডিতদের গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দেন। এ ধরনের পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নজির যেহেতু খুব একটা দেখা যায় না, সেক্ষেত্রে আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উভয় পদ্ধতির যে কোনো একটি অনুসরণ করে তা কার্যকর করতে পারে।

সুতরাং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর সম্পর্কিত আদেশ পরিবর্তন করা হল।

এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ওয়াসিম আক্তার ওরফে তারেক ওরফে মারফত আলী, রাশেদ ড্রাইভার ওরফে আবুল কালাম ওরফে রাশেদুজ্জামান ওরফে শিমন খান, ইউসুফ ওরফে মোসাহাব মোড়ল ওরফে আবু মুসা হারুন, শেখ ফরিদ ওরফে মাওলানা শওকত ওসমান, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই ও মাওলানা আব্দুর রউফ ওরফে আব্দুর রাজ্জাক ওরফে ওমর।

২০০০ সালের ২০ জুলাই কোটালীপাড়ার শেখ লুৎফর রহমান মহাবিদ্যালয়ের উত্তর পাশে তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণের জন্য মঞ্চ নির্মাণের সময় মাটিতে পুঁতে রাখা ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পাওয়া যায়। পরদিন ৮০ কেজি ওজনের আরও একটি বোমা উদ্ধার করা হয় কোটালীপাড়ার হেলিপ্যাড থেকে।

তার এক দিন পর নিজের নির্বাচনি এলাকায় দাদার নামে প্রতিষ্ঠিত ওই কলেজ মাঠে জনসভায় শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল।

ওই ঘটনায় কোটালীপাড়া থানার উপপরিদর্শক নূর হোসেন বাদী হয়ে হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা করেন।


তথ্যসূত্রঃ যুগান্তর

শেয়ার করুন