Previous
Next

সর্বশেষ

Sunday, 23 March 2025

সিলেটে ধানক্ষেত থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার

সিলেটে ধানক্ষেত থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার


সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায় ধান ক্ষেত থেকে মাখন মিয়া  (৩৫) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে ওসমানীনগর থানা পুলিশ।

২২ মার্চ (শনিবার) সকাল সাড়ে ১২ টায় উপজেলার আইলাকান্দি গ্রামের বাড়ীর পাশে ধানক্ষেতে শরীরে জখম ও রক্তমাখা অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।

মাখন মিয়ার বর্তমান ঠিকানা তাজপুর ইউনিয়নের আইলাকান্দি গ্রামে হলেও স্থায়ী ঠিকানা একই উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের কুরুয়া গ্রামের মৃত মফিজ মিয়ার ছেলে বলে জানা গেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ শে মার্চ  রাত ১১ টার সময় প্রয়োজনীয় কাজে মাখন মিয়া বাড়ী হতে বেড় হন। রাতভর বাড়ীতে না আসায় তার  স্ত্রী রেনু বেগম আত্মীয়স্বজনকে বিষয়টি অবগত করেন। সকালবেলা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে দুপুরে বাড়িরপাশে ধানক্ষেতে জুতা এবং রক্ত দেখে মামাতো ভাই ফটিক মিয়ার সন্দেহ হলে পাশেই ধানক্ষেতে  মাখন মিয়াকে খুজেন তিনি। একপর্যায়ে তিনি ধান ক্ষেতে রাতের আধারে কে বা কারা হত্যা করে মাখন মিয়ার লাশ পড়ে থাকতে দেখে  দ্রুত  পুলিশে খবর দেন।

খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ওসমানীনগর) সার্কেল মো. আশরাফুজ্জামান, অফিসার্স ইনচার্য (ওসি) মো.মোনায়েম মিয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। উদ্ধারকৃত লাশটির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়ালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

এ বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। 
গোলাপগঞ্জে ট্রাক চাপায় যুবকের মৃত্যু

গোলাপগঞ্জে ট্রাক চাপায় যুবকের মৃত্যু


সিলেটের গোলাপগঞ্জে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে ট্রাক চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।

নিহত যুবকের নাম মামুন আহমদ (২৪)। সে উপজেলার ফুলবাড়ি ইউপির সিংপুর পাঁচামাইল গ্রামের মাহবুবুর রহমান টেফন মিয়ার  ছেলে।

শনিবার ( ২২ মার্চ) বিকেলে উপজেলার হেতিমগঞ্জ চৌমুহনীর অদূরে রফিপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, মামুন আহমদ নিজ বাড়ি থেকে উপজেলার হেতিমগঞ্জ বাজারে মোটরসাইকেলে আসার পথে ফুলবাড়ি ইউনিয়নের রফিপুর এলাকার নয়া মসজিদের পাশে আশা মাত্র বিপরীত দিক থেকে আসা একটি অজ্ঞাত ট্রাক মামুন আহমদকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়।

পরে তাকে স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার অবস্থা অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেটের বেসরকারি হাসপাতাল ইবনে সিনায় নিয়ে আসেন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মামুন আহমদের মৃত ঘোষণা করেন।

গোলাপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান মোল্যা বলেন, নিহতের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘাতক ট্রাক চালককে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। 

Saturday, 22 March 2025

রাজনীতিতে ‘হস্তক্ষেপের এখতিয়ার’ সেনাবাহিনীর নেই: নাহিদ ইসলাম

রাজনীতিতে ‘হস্তক্ষেপের এখতিয়ার’ সেনাবাহিনীর নেই: নাহিদ ইসলাম


রাজনীতি নিয়ে কোনো ‘প্রস্তাব বা সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার’ সেনাবাহিনী কিংবা রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের নেই বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

শুক্রবার রাতে দলের জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেন, "নির্বাচন ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সরকার, জনগণ ও বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোরই এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে।

“সেনাবাহিনী বা রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য বা পরিকল্পনা, সিদ্ধান্ত বা প্রস্তাব দেওয়ার এখতিয়ার নেই। এ ধরনের চর্চা যেন বাংলাদেশে না হয়। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিকভাবেই হবে এবং সামনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতেই আমরা উত্তরণ করতে চাচ্ছি।"

শুক্রবার রাতে বাংলা মোটর রূপায়ন টাওয়ারে এনসিপির প্রধান কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকে দলটি।

আওয়ামী লীগের 'পরিশীলিত' নেতাদের নিয়ে নতুন করে দলটি গোছানোর জন্য দেশ ও দেশের বাইরে থেকে প্রচেষ্টা চলছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। এ নিয়ে সোচ্চার হয়েছে গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র নেতাদের এই অংশটি।

সংবাদ সম্মেলনে এনসপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আজ থেকে সাত মাস আগে ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে দেশকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেছিল। আমাদের আশা ছিল বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ক্লোজ হয়ে গেছে।

“কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায় থেকে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে। বিদেশি শক্তিগুলো অনেক সময় আওয়ামী লীগের পক্ষে সম্মতি উৎপাদনের চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগ নিয়ে এসব দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জাতীয় নাগরিক পার্টি শক্ত অবস্থান ব্যক্ত করছে।”

লিখিত বক্তব্যে নাহিদ বলেন, গণঅভ্যুত্থানের সাত মাস অতিবাহিত হলেও গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের খুনিদের বিচারের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।

"আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। আমরা তার বক্তব্যের নিন্দা জানাই। আওয়ামী লীগের পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড, আগ্রাসনবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ড, গুম-ক্রসফায়ার, ভোট ডাকাতিসহ জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রশ্নে কার্যকর অগ্রগতি দৃশ্যমান হওয়ার আগে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল পদ থেকে এ ধরনের বক্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত।"


তিনি বলেন, "এনসিপি মনে করে বিচারিক কার্যক্রমের পরিণতি দৃশ্যমান হতে হবে। কৃত অপরাধের বিচার, দায় স্বীকার, অনুশোচনা, পাপমোচন ছাড়া আওয়ামী লীগের দল হিসেবে ক্রিয়াশীল থাকার পক্ষে যেকোনো ধরনের তৎপরতা ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনের শামিল।

“এনসিপি জুলাই গণহত্যাসহ বিগত ফ্যাসিবাদী রেজিমে সংঘটিত অপরাপর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নিশ্চয়তা চায়। বিচার চলাকালীন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে এবং এ মাফিয়াগোষ্ঠীর রাজনীতিতে ফেরার যেকোনো প্রচেষ্টাকে এনসিপি প্রতিহত করবে।”

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি রাজনৈতিক দল কেন নিষিদ্ধ থাকবে, সেই প্রশ্নের উত্তরে নাহিদ বলেন, "আওয়ামী লীগ কোনো গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক দল নয়; বরং এটি একটি ফ্যাসিবাদী দল। নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পরাজয় ঘটেনি।

“দল হিসাবে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী রেজিম বাংলাদেশ থেকে উৎখাত হয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগ এ মুহূর্তে গণতান্ত্রিক ফ্রেমওয়ার্কের বাইরে অবস্থান করছে।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নাহিদ বলেন, “ বিচার অনিষ্পন্ন রেখে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়ার যেকোনো ধরনের আলোচনা ও প্রস্তাব এনসিপি দৃঢ়তার সাথে প্রত্যাখ্যান করে। আওয়ামী মতাদর্শ, দল ও মার্কার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণ ৩৬ জুলাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে।

“ফলে দল ও মতাদর্শ হিসাবে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে। গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচার চলাকালে আওয়ামী লীগ ও ফ্যাসিবাদের সব সহযোগী ব্যক্তি ও সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।" 

ক্যান্টনমেন্টে কী ঘটেছিল?

এনপিপির সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, "গত ৫ অগাস্টের পর সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন সময় দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে। কিন্তু ১১ মার্চের সাক্ষাতের প্রেক্ষাপট ভিন্ন ছিল। আমাদেরকে সেখানে আহ্বান জানান হয়েছিল। অপর প্রান্তে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন।”

সেনা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যে আলাপ হয়েছে, তা ফেইসবুকেই স্পষ্ট করা হয়েছে উল্লেখ করে হাসনাত বলেন, "এটা রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা বলে আমরা মনে করছি। রাজনীতির ঘটনা প্রবাহ রাজনীতিবিদদের হাতে থাকা উচিত।

“কিছু দিন আগে সেনাপ্রধানের একটা বক্তব্য আপনার লক্ষ্য করেছেন। রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে এটাকে অশোভন হিসেবে ধরা হয়েছে। সেখানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানকে যেভাবে এড্রেস করা হয়েছে, আওয়ামী লীগসহ ইনক্লুসিভ নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে।”

নিরাপত্তার ঝুঁকি অনুভব করছেন কিনা, এমন প্রশ্নে হাসনাত বলেন, "ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যতক্ষণ ঐক্যবদ্ধ, ততক্ষণ নিরাপত্তার কোনো ঝুঁকি অনুভব করছি না।

“আওয়ামী লীগ যে একটা গণহত্যা চালাইছে, সে এটাই স্বীকার করে নাই। তার মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। সেজন্য আমরা বলছি, আগে তার বিচার নিশ্চিত করতে হবে, দল হিসেবে বিচার নিশ্চিত করতে হবে, অপরাধ স্বীকার করতে হবে, তারপর অন্য কোনো আলোচনা হইলে হইতে পারে। এর আগে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা অসম্ভব, ইম্পসিবল।"

একাত্তর প্রসঙ্গ

এনসিপি ২০২৪ সালের পাশাপাশি ১৯৭১ সালের গণহত্যার বিচার নিয়ে কী ভাবছে- এমন প্রশ্নে নাহিদ বলেন, "আমরা জুলাই গণহত্যার বিচার নিয়ে অনেক বেশি কনসার্ন। কারণ একাত্তরের গণহত্যার বিচার নিয়ে এখনও অনেক প্রশ্ন আসছে। সেটা আমাদের পুরাতন প্রজন্মের দায়।

“আমরা একাত্তরের পরে একাত্তরে সংগঠিত গণহত্যার বিচার নিষ্পন্ন করতে পারি নাই। রাজনৈতিক প্রশ্নগুলোর সমাধান করতে পারিনি। এরকম পরিস্থিতির যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, সেজন্য আমরা আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে খুবই কঠোর অবস্থানে। এবং এই বিচারটা আমরা নিষ্পন্ন দেখতে চাই। ৭১ থেকে শুরু করে বাংলাদেশে যত গণহত্যা হয়েছে, সব বিচারই আমরা চাই। তবে রাজনৈতিকভাবে এ মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ।"

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটিকে নিষিদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয়।

গত অক্টোবরে আওয়ামী লীগের ওপর ‘নিষেধাজ্ঞা চেয়ে’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তখনকার সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ রিট আবেদন করেছেন বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর আসে।

পরে এ বিষয়ে একই বক্তব্য আলাদাভাবে ফেইসবুকে পোস্ট করে তারা বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা আদেশ চেয়ে রিট আবেদন করা হয়নি। তারা দুটো রিট আবেদন করেছেন আওয়ামী লীগের বিগত তিনটি নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণার আর্জি জানিয়ে। সেখানে নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়নি, মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দলটিকে ‘রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখার’ কথা বলা হয়েছে।

এর মধ্যে সবশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে হাসনাতের দেওয়া ফেইসবুক পোস্ট ঘিরে নতুন করে আলোচনায় আসে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ‘দাবি’।

ফেইসবুক পোস্টে হাসনাত অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনতে সেনা প্রশাসন তাদের ‘চাপ দিচ্ছে’।

তার এ দাবির বিষয়ে অবশ্য সেনা সদর কিংবা আইএসপিআরের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

হাসনাতের পোস্টের পর শুক্রবার জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এদিন এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, “আওয়ামী লীগ পুরনো দল, এখন সেই দলের যারা অপরাধী, অপরাধের বিচার হলে তারপরে তারা জনগণের কাছে গিয়ে, জনগণ যদি তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দেয় সেখানে তো আমাদের কিছু বলার নেই।”
হাসনাত ও আসিফের বক্তব্যে রাজনীতিতে উত্তাপ

হাসনাত ও আসিফের বক্তব্যে রাজনীতিতে উত্তাপ


সেনাবাহিনী বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিপি) নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ এনেছেন, তা রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

বোমা ফাটিয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও। তার দাবি, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হোক, ‘তা চাননি’ সেনাপ্রধান।

তাদের এমন বক্তব্যের মধ্যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়; সড়কে সেনাবাহিনীর অবস্থান দেখা গেছে অন্য দিনের তুলনায় বেশি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে একটি ঝটিকা মিছিল করেছে ‘ছাত্রলীগ’।


আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সরাসরি কোনো অবস্থান প্রকাশ না করে বিএনপি বলছে, ক্ষমতাচ্যুত দলটির রাজনীতিতে ফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে ‘জনগণ’।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন জনগণ ‘মেনে নেবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান।

তিনি বলেছেন, “জনগণ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গণহত্যার বিচারটাই দেখতে চায়। এর বাইরে অন্য কিছু ভাবার কোনো সুযোগ নেই।


“আমরা সর্বস্তরের জনগণকে সংযত, সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থেকে দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানাই।”

অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের নিয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম দলের নেতা হাসনাতের বক্তব্যকে সমর্থন করে বলেছেন, রাজনৈতিক কোনো বিষয়ে প্রস্তাব বা হস্তক্ষেপের এখতিয়ার সেনাবাহিনী বা রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের নেই। এ ধরনের চর্চা যাতে বাংলাদেশে আর না হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের মত রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম চালানোর অধিকারের বিষয়টি ‘জনগণের রায়ের’ ওপর ছেড়ে দিতে হবে। আইন করে বা চাপিয়ে দিয়ে কোনো দলকে নিষিদ্ধ করা ‘ভালো বার্তা বহন করে না’।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন বলেন, “কোনো দল নিষিদ্ধের পক্ষে নই। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, মানুষের কাছে কোন দল রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে থাকবে কিনা সেটা মানুষ তার গণতান্ত্রিক মতামতের যে প্রক্রিয়া, সেটি সুষ্ঠুভাবে হলে জানান দিতে পারে, কোন দলকে সে চায়, কোন দলকে চায় না।

“গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণের মতামতের ওপর নির্ভর করতে হয়। আইন করে বা চাপিয়ে দিয়ে সেটা করাটা বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভালো বার্তা বহন করে না।”

হাসনাতের বক্তব্যের বিষয়ে জোবাইদা নাসরীন বলেন, “ফেইসবুক পোস্ট নিয়ে মন্তব্য দেওয়া কঠিন। গতকাল ও আজকের- দুদিনের রাজনৈতিক প্রবাহ অনেক বেশি ভিন্নতা ও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে হাসনাত আব্দুল্লাহর পোস্ট বক্তব্য ও পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা মিছিল হয়েছে গণমাধ্যমে জেনেছি।”

তবে বিষয়টি নিয়ে সেনা সদর কিংবা আইএসপিআরের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এখনো পাওয়া যায়নি।

আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হঠাৎ কেন আলোচনায় 

বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (আইসিজি) প্রেসিডেন্ট ও সিইও কমফোর্ট ইরোর সঙ্গে আলোচনায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো পরিকল্পনা না থাকার কথা তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

তবে দলটির যেসব নেতার বিরুদ্ধে হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, তাদের বাংলাদেশের আদালতে বিচারের আওতায় আনার কথা বলেছেন তিনি।

তার ওই বক্তব্যের পর রাতে ফেইসবুক পোস্টে সেনানিবাস থেকে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে ‘চাপ দেওয়ার’ অভিযোগ তোলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক এই সমন্বয়ক বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে এক ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, ১১ মার্চ দুপুর আড়াইটায় তিনিসহ তিনজনের কাছে সেনানিবাস থেকে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগকে’ রাজনীতিতে পুনর্বাসনের প্রস্তাব দেওয়া হয়।

ওই বৈঠকে ‘৪০ বছরের বেশি সময়’ সেনাবাহিনীতে কর্মরত একজন কর্মকর্তার সঙ্গে তাদের মতবিরোধ ও বচসা হওয়ার কথা তুলে ধরে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, এক পর্যায়ে বৈঠক শেষ না করেই তাদের চলে আসতে হয়েছে।

হাসনাত তার পোস্টে লিখেছেন, “আমাদেরকে প্রস্তাব দেওয়া হয় আসন সমঝোতার বিনিময়ে আমরা যেন এই প্রস্তাব মেনে নিই। আমাদেরকে বলা হয়–ইতোমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে–তারা শর্তসাপেক্ষে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে রাজি হয়েছে।

“একটি বিরোধী দল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা না-কি ভালো। ফলশ্রুতিতে আপনি দেখবেন গত দুইদিন মিডিয়াতে আওয়ামী লীগের পক্ষে একাধিক রাজনীতিবিদ বয়ান দেওয়া শুরু করেছে।”

ইউনূসের বক্তব্য এবং হাসনাতের ফেইসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে শুক্রবার গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।

শুক্রবারও একই দাবিতে পৃথক বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। একটি বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ মঞ্চ’ নামে একটি নতুন প্ল্যাটফর্মের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।

এক মাসের বেশি সময় ধরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান।

ওই আন্দোলনের মধ্যে ১৪ শ মানুষ নিহত এবং কয়েক হাজার মানুষ আহত হওয়ার তথ্য উঠে এসেছে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে। সেসব ঘটনায় হামলার জন্য শেখ হাসিনাকে দায়ী করে তার সরকারের মন্ত্রী ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হচ্ছে।

জুলাইয়ের সেসব নিহতের ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার করার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

অপরদিকে আন্দোলন দমনে ভূমিকার জন্য আওয়ামী লীগকে অনেকে এখন ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ আখ্যায়িত করে নিষিদ্ধের দাবি তুলেছেন। সরকার পতন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম সারির নেতারাও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পক্ষে।

এরইমধ্যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও দলটির নিবন্ধন বাতিল চেয়ে গত ১৯ অগাস্ট হাই কোর্টে রিট আবেদন হয়েছে এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে। অবশ্য, রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন না পাওয়ার প্রেক্ষাপটে ওই রিট আবেদন থেকে সরে আসেন হাসনাতরা।

এদিকে, রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে শুক্রবার রাতে একটি ঝটিকা মিছিল বের করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের একদল নেতাকর্মী। মিছিল থেকে তিনজনকে আটকের কথা বলেছে পুলিশ।

কী বলেছেন আসিফ মাহমুদ

হাসনাতের বক্তব্য নিয়ে উত্তাপের মধ্যে এক ভিডিওবার্তায় অভ্যুত্থানের আরেক ছাত্রনেতা, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ অভিযোগ করেছেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হন, ‘তা চাননি’ সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। কিন্তু ছাত্রনেতাদের অনড় অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত মেনে নেন।

৬ অগাস্ট বঙ্গভবনে ওই বৈঠকের ঘটনাক্রম তুলে ধরে তিনি বলেন, “সেনাপ্রধানের দিক থেকে মূল ভেটোটা (আপত্তি) ছিল ড. মুহাম্মদ ইউনূস কেন? হোয়াই নট এনি আদার পারসন (অন্য কেউ কেন নয়)? ড. ইউনূসের নামে মামলা আছে। তিনি একজন কনভিকটেড পারসন (দণ্ডিত ব্যক্তি)। একজন কনভিকটেড পারসন কীভাবে আসলে একটা দেশের প্রধান উপদেষ্টা হতে পারে?

“উনি সরাসরি বলেছেন যে, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারটাকেতো সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে, আওয়ামী লীগতো ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দুচক্ষে দেখতে পারে না, একদম অপছন্দ করে। তো, আওয়ামী লীগ একটা লোককে একেবারে দেখতে পারছে না, বাংলাদেশেতো আলটিমেটলি ৩০-৪০ শতাংশ মানুষতো আওয়ামী লীগকে সাপোর্ট করে। এই ৩০-৪০ শতাংশ মানুষের মতামতের বিরুদ্ধে গিয়ে একটা লোককে প্রধান উপদেষ্টা করা উচিত’?”

আসিফ মাহমুদ বলেন, “সেনাপ্রধান লাস্ট, আমার মনে পড়ে আমাদের বলেছিলেন, ‘আমি বুকে পাথর চাপা দিয়ে এই সিদ্ধান্তটা মেনে নিচ্ছি’।”

কী লিখেছেন হাসনাত

সেনানিবাস থেকে আসা প্রস্তাবের বিষয়ে হাসনাত তার পোস্টে লিখেছেন, “আমাদেরকে প্রস্তাব দেওয়া হয় আসন সমঝতার বিনিময়ে আমরা যেন এই প্রস্তাব মেনে নিই। আমাদেরকে বলা হয়–ইতোমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে–তারা শর্তসাপেক্ষে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে রাজি হয়েছে।

“একটি বিরোধী দল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা না-কি ভালো। ফলশ্রুতিতে আপনি দেখবেন গত দুইদিন মিডিয়াতে আওয়ামী লীগের পক্ষে একাধিক রাজনীতিবিদ বয়ান দেওয়া শুরু করেছে।”

হাসনাত লিখেছেন, “রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ভারতের। সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরিন শারমিন, তাপসকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।

“আমাদেরকে আরো বলা হয়–রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ যাদের দিয়ে করা হবে, তারা এপ্রিল-মে থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবে, হাসিনাকে অস্বীকার করবে এবং তারা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করবে এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবে।”

সেনা কর্মকর্তাদের এমন প্রস্তাবের বিরোধিতার কারণে বৈঠকে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে কর্মকর্তাদের বচসা হয় বলে ফেইসবুকে পোস্টে দাবি করেছেন এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ।

তিনি লিখেছেন, “আমাদেরকে এই প্রস্তাব দেওয়া হলে আমরা তৎক্ষণাৎ এর বিরোধিতা করি এবং জানাই যে, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে কাজ করুন। এর উত্তরে আমাদের বলা হয়, আওয়ামী লীগকে ফিরতে কোন ধরনের বাধা দিলে দেশে যে সংকট সৃষ্টি হবে, তার দায়ভার আমাদের নিতে হবে এবং ‘আওয়ামী লীগ মাস্ট কাম ব্যাক’।

“আলোচনার এক পর্যায় বলি–যেই দল এখনো ক্ষমা চায় নাই, অপরাধ স্বীকার করে নাই, সেই দলকে আপনারা কিভাবে ক্ষমা করে দিবেন! অপরপক্ষ থেকে রেগে গিয়ে উত্তর আসে, ‘ইউ পিপল নো নাথিং। ইউ ল্যাক উইজডম অ্যান্ড এক্সপিরিয়েন্স। উই আর ইন দিজ সার্ভিস ফর অ্যাটলিস্ট ফোর্টি ইয়ার্স। তোমার বয়সের থেকে বেশি। তাছাড়া আওয়ামী লীগ ছাড়া ইনক্লুসিভ ইলেকশন হবে না’।

“উত্তরে বলি, আওয়ামী লীগের সাথে কোনো ইনক্লুসিভিটি হতে পারে না। আওয়ামী লীগকে ফেরাতে হলে আমাদের লাশের উপর দিয়ে ফেরাতে হবে। আওয়ামী লীগ ফেরানোর চেষ্টা করা হলে যে সংকট তৈরি হবে, তার দায়ভার আপনাদের নিতে হবে। পরে- মিটিং অসমাপ্ত রেখেই আমাদের চলে আসতে হয়।”

এরপর শুক্রবার রাতে এনসিপির ডাকা জরুরি সংবাদ সম্মেলনেও ফেইসবুক পোস্টে লেখা ঘটনার একটি বর্ণনা দেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।

নতুন দলের এই মুখ্য সংগঠক বলেন, "গত ৫ অগাস্টের পর সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন সময় দেখা সাক্ষাৎ হয়েছে। কিন্তু ১১ মার্চের সাক্ষাতের প্রেক্ষাপট ভিন্ন ছিল। আমাদেরকে সেখানে আহ্বান জানান হয়েছিল। অপর প্রান্তে ঊর্ধ্বতন ও কর্মকর্তারা ছিলেন।

সেনা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যে আলাপ হয়েছে তা ফেইসবুকেই ‘স্পষ্ট করা হয়েছে’ মন্তব্য করে হাসনাত বলেন, "এটা রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা বলে আমরা মনে করছি। রাজনীতির ঘটনা প্রবাহ রাজনীতিবিদদের হাতে থাকা উচিত।”

তিনি বলেন, “কিছুদিন আগে সেনাপ্রধানের একটা বক্তব্য আপনার লক্ষ্য করেছেন। রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে এটাকে অশোভন হিসেবে ধরা হয়েছে। সেখানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানকে যেভাবে অ্যাড্রেস করা হয়েছে, আওয়ামী লীগসহ ইনক্লুসিভ নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে।”

এই ঘটনার পর নিরাপত্তার ঝুঁকি অনুভব করছেন কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে হাসনাত বলেন, "ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যতক্ষণ ঐক্যবদ্ধ, ততক্ষণ নিরাপত্তার কোনো ঝুঁকি অনুভব করছি না।

"আওয়ামী লীগ যে একটা গণহত্যা চালাইছে, সে এটাই স্বীকার করে নাই। তার মধ্যে কোনো অনুশোচনা বোধ নেই। সেজন্য আমরা বলছি আগে তার বিচার নিশ্চিত করতে হবে, দল হিসেবে বিচার নিশ্চিত করতে হবে, অপরাধ স্বীকার করতে হবে, তারপর অন্য কোনো আলোচনা হইলে হইতে পারে। এর আগে আওয়ামী লীগের সাথে কোনো ধরনের আলোচনা অসম্ভব, ইম্পসিবল," বলেন হাসনাত।

রাজনীতিক ও বিশ্লেষকদের ভাষ্য

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ফিরতে পারবে কিনা, তা চব্বিশের জুলাই আন্দোলনে চালানো হত্যাযজ্ঞের বিচারের পরে নির্ধারণ হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, “অনেক কথা উঠছে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে কি পারবে না। যারা গণহত্যা চালালো তাদের বিচার হবে কিনা? কারা চালিয়েছে এটা কি মানুষ দেখেনি? কোন পুলিশ, কোন ওসি, কোন এসপি, কোন ডিসি এখানে ভূমিকা রেখেছে। কার নির্দেশে কার বলায় এই গণআন্দোলনে রক্ত ঘটানোর জন্য, এই গণআন্দোলন ধ্বংস করার জন্য, দমন করার জন্য কার নির্দেশ, আওয়ামী লীগের কোন নেতাদের নির্দেশ রয়েছে।

“আপনারা (সরকার) এদের বিচার দ্রুত নিশ্চিত করতে পারলে…আওয়ামী লীগ পুরনো দল, এখন সেই দলের যারা অপরাধী, অপরাধের বিচার হলে তারপরে তারা জনগণের কাছে গিয়ে, জনগণ যদি তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দেয় সেখানে তো আমাদের কিছু বলার নেই।”

শুক্রবার রাতে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, "নির্বাচন এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সরকার, জনগণ ও বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে।

“সেখানে সেনাবাহিনী বা রাষ্ট্রীয় কোন প্রতিষ্ঠানের এই বিষয়ে কোন মন্তব্য বা পরিকল্পনা, সিদ্ধান্ত বা প্রস্তাব দেওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। এই ধরনের চর্চা যাতে বাংলাদেশে না হয়। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিকভাবেই হবে এবং সামনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতেই আমরা উত্তরণ করতে চাচ্ছি।"

সংবাদ সম্মেলনে এনসপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আজ থেকে সাত মাস আগে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে, রক্ত দিয়ে আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেছিল। আমাদের আশা ছিল বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ক্লোজ হয়ে গেছে।

“কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায় থেকে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে। বিদেশি শক্তিগুলো অনেক সময় আওয়ামী লীগের পক্ষে সম্মতি উৎপাদনের চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগ নিয়ে এসব দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জাতীয় নাগরিক পার্টি শক্ত অবস্থান ব্যক্ত করছে।”

ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থেকে পদত্যাগ করে রাজনীতিতে নামা এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের সাত মাস অতিবাহিত হলেও ‘গণহত্যাকারী’ শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের খুনিদের বিচারের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।

"আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। আমরা তার বক্তব্যের নিন্দা জানাই। আওয়ামী লীগ কর্তৃক সংঘটিত পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড, আগ্রাসনবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ড, গুম-ক্রসফায়ার, ভোট ডাকাতিসহ জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রশ্নে কার্যকর অগ্রগতি দৃশ্যমান হওয়ার আগে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল পদ থেকে এ ধরনের বক্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত।"

তিনি বলেন, এনসিপি মনে করে, বিচারিক কার্যক্রমের পরিণতি দৃশ্যমান হতে হবে। কৃত অপরাধের বিচার, দায় স্বীকার, অনুশোচনা, পাপমোচন ব্যতীত আওয়ামী লীগের দল হিসেবে ক্রিয়াশীল থাকার পক্ষে যে কোনো ধরনের তৎপরতা ‘ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনের শামিল’।

“এনসিপি জুলাই গণহত্যাসহ বিগত ফ্যাসিবাদী রেজিমে সংঘটিত অপরাপর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নিশ্চয়তা চায়। বিচার চলাকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে এবং এই মাফিয়াগোষ্ঠীর রাজনীতিতে ফেরার যেকোনো প্রচেষ্টাকে এনসিপি প্রতিহত করবে।”

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি রাজনৈতিক দল কেন নিষিদ্ধ থাকবে–সেই প্রশ্নের উত্তরে নাহিদ বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক দল নয়; বরং এটি একটি ফ্যাসিবাদী দল। নানা অপরাধের বিচার অনিষ্পন্ন রেখে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়ার যে কোনো ধরনের আলোচনা ও প্রস্তাব এনসিপি দৃঢ়তার সাথে প্রত্যাখ্যান করে।”

কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধের পক্ষে ‘না থাকার’ কথা তুলে ধরে রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরীন বলেন, “আওয়ামী লীগ দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল। এর আগে নিপীড়নের বিষয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের যে দাবি উঠেছে। এর চেয়ে বড় নিপীড়নের অভিযোগ জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে আছে, সেটাও দাবি মধ্যে আছে। আসলে আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো দল নিষিদ্ধের পক্ষে নই।”

দেশে কোনো দল দেশে টিকে থাকবে কি, থাকবে না তা বাংলাদেশের মানুষ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় মতামতের মধ্য দিয়ে নির্ধারিত হবে বলে মন্তব্য করেন এ অধ্যাপক।

“আইন করে বা চাপিয়ে দিয়ে সেটা করাটা বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভালো বার্তা বহন করে না। রাজনৈতিক দলের ভিত্তি থাকে, জনগণের কাছে রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ, কতটা আস্থা বহন করছে। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ যদি জনগণের কাছে আস্থাভাজন না হয়, জনগণ যদি তাদেরকে বাতিল করে দেয়-সেটিই হবে গুরুত্বপূর্ণ।”

তার ভাষায়, একটি রাজনৈতিক দল কতটুকু জনবান্ধব, জনমুখী সেটা নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়।

বেড়েছে তল্লাশি

সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলার মধ্যে ছাত্রলীগ ছেড়ে আসা সাবেক ছাত্রনেতা হাসনাতের দাবির বিষয়ে সেনা সদর কিংবা আইএসপিআরের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

এদিকে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দেশজুড়ে যৌথ বাহিনীর চলমান অভিযানের মধ্যেই ঢাকায় সেনা সদস্যদের তৎপরতা বেড়েছে।

শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকার বিভিন্ন সড়কে বাড়তি টহলের পাশাপাশি তল্লাশি চৌকি বসিয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর- আইএসপিআরের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী অবশ্য বলছেন, এই তৎপরতা সেনা সদস্যদের ‘নিয়মিত কার্যক্রমেরই অংশ।’

“এটি সেনা সদস্যদের পার্ট অব ডিউটি, বাড়তি টহল বা চেকপোস্ট বলে কিছু নেই। নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সেনা সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।”

শুক্রবার দিনের বিভিন্ন সময় রামপুরা, শান্তিনগর, কাকরাইল, জাতীয় প্রেসক্লাব, বায়তুল মোকাররম, মহাখালী, বিজয় সরণি, গুলশান, খিলক্ষেত এলাকায় চৌকি বসিয়ে তল্লাশি কার্যক্রম চালাতে দেখা গেছে সেনা সদস্যদের।

যৌথ বাহিনীর অভিযানের আওতায় পরিচালিত এসব চৌকিতে সন্দেহভাজন মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার থামিয়ে তল্লাশি চালাতে দেখা গেছে।
সিলেটে ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু

সিলেটে ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু



সিলেটের দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজারে ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তার বয়স আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ বছর। নিহতের নাম পরিচয় তাৎক্ষণিক পাওয়া যায়নি।

শুক্রবার (২১ মার্চ) দুপুর মোগলাবাজার থানার রয়েল সিটির পাশে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া পারাবত এক্সপ্রেসের ছাদে ছিলেন ওই যুবক। এসময় অসাবধানতাবশত ছাদ থেকে নিচে পড়ে গেলে ট্রেনের চাকার নিচে কাটা পড়েন তিনি।

সিলেট রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল কুদ্দুস বলেন,  খবর পেয়ে সিলেট পুলিশ ঘটানাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করেছে। ময়না তদন্তের জন্য যুবকের লাশ সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি জানান, এখনো নিহতের পরিচয় পাওয়া যায়নি। 
সিলেট থেকে যাওয়া লন্ডনের ফ্লাইট ফিরে এলো ঢাকায়!

সিলেট থেকে যাওয়া লন্ডনের ফ্লাইট ফিরে এলো ঢাকায়!



সিলেট থেকে উড্ডয়ন করা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের লন্ডনগামী একটি ফ্লাইট যাত্রা বাতিল করেছে। ফ্লাইটটি মাঝপথ থেকে ফিরে এসে অবতরণ করে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।

মূলত ফ্লাইটটি যাচ্ছিল লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরেরর উদ্দেশ্যে। কিন্তু বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর বন্ধ থাকায় মাঝপথ থেকেই সেটি ঢাকায় ফিরে এসেছে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।

কামরুল ইসলাম জানান, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-২০১ ফ্লাইটটি আজ শুক্রবার সকাল ৮টা ৪২ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। ফ্লাইটটি সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে অবতরণ করে সকাল ৯টা ৬ মিনিটে। এরপর যাত্রী নিয়ে সকাল ১০টা ৪৬ মিনিটে ফ্লাইটটি লন্ডনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। কিন্তু হিথ্রো বিমানবন্দরের পরিস্থিতির কারণে ফ্লাইটটি মাঝপথে ফিরতে বাধ্য হয়। আজ দুপুর পৌনে ২টায় এটি ঢাকায় এসে অবতরণ করেন।

তিনি আরও জানান, ফেরত আসা ওই ফ্লাইটে পাইলট ও কেবিন ক্রুসহ ২৬৭ জন আরোহী রয়েছেন। ঢাকায় অবতরণের পর যাত্রীদের একটি হোটেলে রাখা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ব্যস্ততম হিথ্রো বিমানবন্দরে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে শুক্রবার সারাদিন এটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিমানবন্দরে বিদ্যুৎ সরবরাহের একটি সাবস্টেশনে সমস্যা দেখা দেওয়ায় এই বিপর্যয় নেমে আসে। এতে শত শত ফ্লাইট বাতিল করতে হয়। লন্ডনের সময় রাত ১১টা ৫৯ মিনিট অবধি বিমানবন্দরটি বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে। 
বিভাজনের পথ বেয়েই আ.লীগ আসবে: তথ্য উপদেষ্টা

বিভাজনের পথ বেয়েই আ.লীগ আসবে: তথ্য উপদেষ্টা


বিভাজনের পথ বেয়েই আওয়ামী লীগ আসবে বলে মন্তব্য করে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, অভ্যুত্থানের শক্তির মধ্যকার বিরোধ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হোন। 

শুক্রবার (২১ মার্চ) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।

গুরুতর কয়েকটি বিষয়ে জানতে চেয়ে পোস্টে মাহফুজ আলম লিখেছেন, এস্টাবলিশমেন্ট মাস্টারমাইন্ড বানালো। আবার নিজেরাই মাস্টারমাইন্ডের বিরুদ্ধে নেপথ্য শক্তি’র অন্ধভক্তদের লেলিয়ে দিল। ছাত্রদের মধ্যকার ক্রেডিটবাজির লড়াই কারা শুরু করিয়ে দিল? নেপথ্য শক্তির ন্যারেটিভের পেছনে ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট কি করছিল? বামপন্থিদের একাংশকে কারা প্রথমেই অভ্যুত্থানের শক্তি থেকে আলাদা করে ফেলল? বামপন্থিদের মুজিববাদী অংশ কিভাবে পরিপুষ্ট হলো?

তিনি আরও লিখেন, প্রথম বিতর্ক হলো- সোনার বাংলা নিয়ে। সেখান থেকে কালচারাল ওয়ার শুরু। কখন, কাকে দিয়ে সে খেলা শুরু হলো? হিযবুত গালিটা দেওয়া হলো ছাত্রদের। অথচ ছাত্রদের হিযবুত বলে ন্যারেটিভ বানিয়ে আসল হিযবুতদের পতাকাবাজি করতে হেল্প করেছিল কারা?

এসকেএস টাওয়ারে এস্টাবলিশমেন্টের হাতে এক দশকে গজানো ‘তৌহিদী জনতা’ নামধারীদের প্রথম মিটিং হলো জানিয়ে তথ্য উপদেষ্টা লিখেন, পরে সারা বাংলাদেশে, জেলায় জেলায়। কারা ইন্ধন জোগাল তাদের। আর কার/কাদের বিরোধিতা করল, এখনও করে যাচ্ছে? ঢাকা শহরের স্কুল কলেজে র‌্যাডিকালাইজেশনের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত হলো কাদের আয়োজনে? নেপথ্য শক্তির প্রোপাগান্ডু (স) এবং মিম পেজগুলো একের পর এক আক্রমণ করল অভ্যুত্থানের নেতাদের। অভ্যুত্থানের যে নেতারা শাপলা-শাহবাগের বাইনারি ভাঙতে চাইল, নতুন বন্দোবস্ত গড়তে চাইল- তাদের বিরুদ্ধে নেপথ্য শক্তি, ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট, নেপথ্য শক্তির প্রোপাগান্ডু (স), তৌহিদী জনতা নামধারীদের একসঙ্গে লেলিয়ে দিল কারা? এর বিপরীতে ছাত্রদের প্রতিক্রিয়া কিভাবে ছাত্রদের নিজেদের মধ্যে বিভাজন শতগুণ বাড়িয়ে দিল?

বামপন্থি-ডানপন্থি বিভাজনের জন্য বিভিন্ন মঞ্চ ও আন্দোলনের পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ল কারা এমন প্রশ্ন করে মাহফুজ আলম লিখেন, সেসব মঞ্চের পেছনে নেপথ্য শক্তি কি করছিল? অর্থ ও জনবলের উৎস কারা ছিল? বামপন্থিদের একাংশ হরেদরে কেন এ সরকারের বিরোধী হয়ে উঠল এবং মুজিববাদীদের ক্রীড়ানকে পরিণত হলো? রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে ছাত্রদের নিয়ে টেনশন তৈরি করল কারা? কেন এক্স (সাবেক) কমিশনের এক সদস্য নেপথ্য শক্তির ইন্ধনে সমঝোতা করল? নেপথ্য শক্তিকে কিভাবে সাপোর্ট দেয়া হলো এডমিনে এবং ব্যবসায়ে, প্রকারাস্তরে যা ‘দেশপ্রেমিক’ নেপথ্য শক্তি আর জাতীয়’ শক্তির মধ্যে বিভাজন, সন্দেহ ও দূরত্ব তৈরি করল।

ছাত্ররা এবং অন্যান্য দলের কর্মীরা বিভিন্ন অপরাধ করছে না, তা কিন্তু নয় মন্তব্য করে তথ্য উপদেষ্টা লিখেন, জাতীয় শক্তিই বা কেন বারবার এলাইন করতে থাকল এস্টাবলিশমেন্টের সঙ্গে? কেন তারা ছাত্র-জনতার আবেগের বিরুদ্ধে যেতে চাইল? আর এ আলাইনমেন্টের সূত্রে জাতীয় শক্তি কেন ছাত্রদের ওপর আক্রমণ বহুগুণ বাড়িয়ে দিল, ডিসেম্বর অনওয়ার্ড? অলিগার্কদের টাকা কিভাবে ভাগ করা হলো, এস্টাবলিশমেন্ট, ‘বড়’ নেপথ্যশক্তি আর জাতীয়’ শক্তির মধ্যে? কিভাবে টিকিয়ে রাখা হলো সামিটসহ অন্যান্য গ্রুপের বিজনেস ইন্টারেস্ট। কিভাবে ছাত্রদের একাংশকে টেনে নেয়া হলো সেসব আর্থিক লেনদেনে। যাতে পরবর্তীতে তাদের ব্লাকমেইল করা যায়? 

তিনি আরও লিখেন, লাকি কেন হঠাৎ সামনে আসল? শাহবাগ-শাপলার দ্বন্দ্ব কেন প্রকট হলো? সব বাহিনীর মোরাল কেন এখনো ভঙ্গুর? মিডিয়াগুলোর ন্যারেটিভ কেন এত এত সাজানো ও সময়োপযোগী হয়? মুজিববাদীরা কিভাবে রিওর্গানাইজড হলো মিডিয়া আর কালচারপাড়ায়?

তদুপরি, কোন কোন এডভাইজারের পক্ষ-বিপক্ষ কখন তৈরি করা হলো? কার কার পদত্যাগ চাওয়া হলো আর কাকে কাকে ইসলামবিদ্বেষী, নাস্তিক বানানো হলো? কেনই বা বানানো হলো? উত্তর হিসাবে বিশেষ কারও নাম গুরুত্বপূর্ণ না। আর, সবই অন্যরা করল, আমাদের কোনো দোষ নেই, তাও নয়। কিন্তু ষড়যন্ত্র হয়েছিল এবং এখনো চলমান! তবু, চলুন বিচার ও সংস্কারের পক্ষে কাজ করি। চলুন, শহিদ আহতদের স্পৃহা ও চৈতন্যের বাংলাদেশ তৈরি করতে আগুয়ান হই। এখনো সময় শেষ হয়নি! সবার জন্য শুধরাবার মতন সময় এখনো আছে! জুলাইয়ের মতো করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ারও সুযোগ রয়েছে! চলুন, ছাত্ররা এক হোন/হই আবার। আমাদের বিরুদ্ধে, এ প্রজন্মের বিরুদ্ধে, ‘বাচ্চাকাচ্চা’দের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে। এটাই সত্য! আপনারা রুখে দাঁড়ান এবং জবাবদিহি ও সুবিচারের রাষ্ট্র গঠনে আবার ঐক্যবদ্ধ হোন।

একমাত্র ছাত্র-জনতার জুলাই ঐক্যই পারবে আওয়ামী লীগের ফিরে আসাকে ঠেকিয়ে দিতে দাবি করে মাহফুজ আলম লিখেন, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পুরাতন বন্দোবস্তের সব কলকব্জা বিকল করেই এগোতে হবে। নাহলে কিছুই দীর্ঘমেয়াদে টিকবে না। জুলাই প্রজন্মের একাংশ এস্টাবলিশমেন্টের ফাঁদে পড়েছে, বিভিন্ন সেগমেন্টের ন্যায্য ক্ষোভকে একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে ব্যবহার করা হয়েছে। আমাদের একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয়েছে যাতে এস্টাবলিশমেন্ট অক্ষত থাকে। আর সেটা আছেও বটে! তাই, আমাদের প্রজন্মের সব আবেগকেই আওয়ামী লীগ প্রশ্নে, বিচারের প্রশ্নে, সংস্কারের প্রশ্নে নিবদ্ধ করা এবং এস্টাবলিশমেন্টের পালটা সেটেলমেন্ট গড়ার কাজে লাগানো উচিত। জুলাই প্রজন্ম জিন্দাবাদ! ছাত্র-জনতার জুলাই ঐক্য জিন্দাবাদ।